শরীয়তপুর : প্রতিবাদ করায় ভুক্তভোগীদের উপর বালু ব্যবসায়ীদের হামলা
পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে জনসভা ও বিক্ষোভ করায় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী ভুক্তভোগীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। গত কয়েক দিনে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে জেল, জরিমানাসহ অকেজো করা দেওয়া হয়েছে বালু তোলার ড্রেজার মেশিন।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন অভিযোগ করেছেন বালু ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত নাসির উদ্দিন আহমেদ।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীর জাজিরা ও নড়িয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এতে পদ্মার তীর রক্ষাবাঁধসহ স্থানীয় নদী পাড়ের বাসিন্দারা হুমকিতে পড়লে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে জাজিরা ও নড়িয়ার মোক্তারের চর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জনসভা করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার ব্যবসায়ী ফারুক চৌকিদার ও ফজল মাদবরের নির্দেশে সমাবেশে নেতৃত্বদানকারী নড়িয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক নাসির আহমেদের উপর হামলা করে লিয়াকত হাওলাদার, সুমন, যুবরাজসহ অন্যান্যরা। হামলায় নাসির আহমেদ গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
অন্যদিকে থানা ও নৌ পুলিশের সহায়তায় গত বুধবার সন্ধ্যা রাত থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। অভিযানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে আল আরাফ, আল কাফ, মোতালেব ও এমবি জামানসহ ৫ প্রতিষ্ঠানের বাল্কহেড জব্দ করার পাশাপাশি ১৭ জনকে আটক করে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও শুক্রবার রাতে জাজিরার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বাবুরচর সংলগ্ন এলাকার পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে ৭ জনকে ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২ টি কাটার ড্রেজারের ইঞ্জিন অকেজো করে দেওয়া হয়।
আহত নাসির আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিল। পরিকল্পনা ছাড়া ইচ্ছেমত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধসহ নদী পাড়ের বাসিন্দারা ভাঙনের মুখে পড়বে। এমন আশঙ্কা থেকে আমরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করায় আমার উপর হামলা করেছে বালু ব্যবসায়ীরা। হামলায় আমি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এখনও বালু ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। প্রশাসন যদি আরো কঠোর না হয়, তাহলে আবারও নড়িয়া ও জাজিরাবাসীকে ভিটে-মাটি হারিয়ে পথে বসতে হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ও আমার উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই আমি।”
বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনসভা করায় হামলার ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক স্বপন মাঝি ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল।
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল বলেন, “নাসির আহমেদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তার উপর হামলাকারীদের ইন্ধনদাতা যারা, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই।”
নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, “নাসির আহমেদের উপর হামলার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের জাজিরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক সাদিয়া বিনতে সোলায়মান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, “পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন জেলা প্রশাসক স্যার। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আমিও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। সর্বশেষ গতকাল রাতেও বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী ৭ জনকে ৪ মাসের কারাদ- প্রদান করেছি। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানেই থাকবে।”
সাইফ রুদাদ/এসএমডব্লিউ