অতিবৃষ্টিতে ৩ মাস পিছিয়ে গেছে ফুলের আবাদ, শঙ্কিত চাষিরা
চলতি বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পিছিয়ে গেছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালির কৃষকদের ফুল সেক্টরের ফুলের আবাদ কার্যক্রম। ফলে সামনের বছরের জানুয়ারি মাসেও ফুল নিয়ে বাজার ধরতে পারবে না গদখালির কৃষকেরা। সামনের উৎসব ও দিবসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফুল বিক্রি করতে পারবে না বলে শঙ্কিত তারা।
গদখালির কৃষকেরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষভাগে এসে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত আগস্ট মাস থেকে কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের ফুলের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু এর মাঝে তিন থেকে চার বার অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চারা উৎপাদন করতে ব্যর্থ হন কৃষকেরা। এতে করে গদখালির কৃষকদের এ মৌসুমে চারা উৎপাদনে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিন মাস পিছিয়েছে ফুলের আবাদ।
গদখালির পানিসারা গ্রামের অন্যতম কৃষক ইসমাইল হোসেন। তিনি প্রতি বছর নতুন নতুন জাতের ফুলের চাষ করে চমক দেখান। তবে চলতি বছর তিনিও হতাশ। ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মৌসুমে তিনি ৩-৪ বার বিভিন্ন জাতের ফুলের বীজতলা তৈরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বারংবার বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিন মাস পিছিয়ে চলতি নভেম্বর মাসে বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনের কাজ করছেন তিনি। এ বছর তার ক্ষেতে প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
একই কথা বলেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এ বছর আমরা তিন মাস পিছিয়ে গিয়েছি। ফলে প্রতি বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসসহ যে দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা ফুলের চাষাবাদ করি সে দিবসগুলোতে আমাদের ফুল বাজারজাত করতে পারব কিনা সেটি নিয়ে আমরা এখনো অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, এখন যেসকল ফুলের চারা রোপণ করছি এগুলো হয়তো জানুয়ারির শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাজারজাত করা যাবে। তাও তখন আমাদের ফুল বিক্রির মৌসুমের দেড় মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, ফলে কৃষকদের বড় অংকের লোকসানের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
হাড়িয়া গ্রামের কৃষক সাত্তার মাল বলেন, আমার চার বিঘা জমিতে মাত্র রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস আর গাঁদা ফুলের চাষ করেছি। এ বছর বৃষ্টির কারণে ফুল উৎপাদন কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে তবুও ভালো দাম পেলে বা বাজারদর ভালো থাকলে হয়তো লোকসান গুনতে হবে না।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর দেশের মোট ফুল চাহিদার ৭০ শতাংশ এ ফুলের রাজধানী পূরণ করে থাকে। এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কৃষকদের অনেক ফুল ও বীজতলা বা আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে, তারা এখন পুনরায় বীজতলা তৈরি বা চারা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ বছর এ গদখালিতে চারা উৎপাদনে কৃষকদের প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমাদের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩-৪ কোটি টাকা। কিন্তু মাঠে এখনও ফুল দেখা যাচ্ছে না। কৃষকেরা মাত্র ফুলের চারা রোপণ করেছে। ফলে এ উৎসবগুলোতে বাজার ধরতে না পারলেও সামনে বছরের মৌসুমের শেষ সময়ে বাজার ধরতে পারবে। তবুও একটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু-তালহা বলেন, যশোর জেলাতে এ বছর ৬৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি আবাদ হয়েছে গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার। এছাড়া অনান্য ফুলের আবাদও করেছে চাষিরা।
তিনি আরও বলেন, এবছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকদের আগাম আবাদে একটু সমস্যা হয়েছে। তাদের আবাদ কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। তবে আমরা আশাবাদী কৃষকেরা ফুলের ভালো ফলন ও ভাল দাম পাবে। আমাদের মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহোযোগিতা করে যাচ্ছে।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে