জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত এক হাজার বিঘা আমন ধানের খেত, নালা খননের দাবি
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে মাত্র দুই কিলোমিটার নালার অভাবে জলাবদ্ধতায় প্রায় এক হাজার বিঘা পাকা আমন ধানের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষার শেষ সময়ে ৩০০ বিঘা জমি পানির নিচে ছিল। এছাড়া ভরা বর্ষায় কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। ফলে সঠিক সময়ে ধান রোপণ ও কাটতে না পারায় চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
জলাবদ্ধতার কারণে শুধু আমন নয়, ইরি মওসুমেও কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করা বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কোনো কোনো মৌসুমে অপরিপক্ব ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে ইউনিয়নের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভেলাকোপা বিলের উভয় দিকের পাথারের আমন ধানের জমিগুলোতে এখনো হাঁটু সমান পানি। এমন পানির মধ্যেই বেশ কিছু জমিতে ধান কাটছেন কৃষকরা। কেউ কেউ পানিতে নিমজ্জিত হওয়া অপরিপক্ব ধানই কাটছেন। আবার অনেক জমির পাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় আছে। তবে, বেশিরভাগ জমির ফসল পাকতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার দুই পাশ দিয়ে নালা থাকলেও মাঝের দুই কিলোমিটার অংশে নালা নেই। সাদুল্লাপুর থেকে আসা একটি নালা তুলসীঘাট হয়ে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে শেষ হয়েছে। অপরদিকে, পূর্ব রাধাকৃষ্ণপুর থেকে আলাই নদীতে সংযুক্ত নালা শুরু হলেও ভেলাকোপা থেকে পূর্ব হরিপুর পর্যন্ত কোনো নালা না থাকায় এই অংশের পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। ফলে প্রতি বছর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
বর্গাচাষি সাইফুল শেখ বলেন, ধার করে জমি চাষ করেছি। এখন পাকা ধান পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। খরচ তো উঠবেই না, বরং লোকসান গুনতে হবে।
আরও পড়ুন
জফের উদ্দিন দুদু বলেন, চাষাবাদে সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ঠিকমতো ফলাতে পারছি না। পানিতে ধান কাটতে শ্রমিক পেতে দ্বিগুণ মজুরি দিতে হয়। এতে ক্ষতি আরও বেড়ে যায়।
বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাবু বলেন, রাধাকৃষ্ণপুরে জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ধান চাষিরা। তাদের বাঁচাতে দ্রুত নালা খনন প্রয়োজন।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদ আল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখানে আগে একটি ক্যানেল ছিল। ম্যাপ দেখে ক্যানেল থাকলে তা উদ্ধার করা হবে। অন্যথায়, সরকারি প্রকল্পের আওতায় দ্রুত খাল খননের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয়রা দ্রুত দুই কিলোমিটার নালা খননের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই সমস্যার সমাধান হলে পুরো মৌজায় তিন ফসলি জমি চাষ করা সম্ভব হবে।
রিপন আকন্দ/এফআরএস