বস্তায় আদা চাষে ২ গৃহবধু ও গৃহকর্তার বাজিমাত, বড় লাভের আশা
নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় বর্তমান বাজারে এর দাম বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় এ বছর ২ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ লক্ষ বস্তায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হাজার বস্তায়, নাচোল উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ বস্তায়, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৩ হাজার বস্তায় এবং ভোলাহাট উপজেলায় ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হচ্ছে।
আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এ জেলার চাষিরা অন্য ফসলের পাশাপাশি ধানের আবাদ বেশি করেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহোযোগিতায় পুকুরের পাড়ে আম বাগানের নিচে আদা চাষ করে সফল হয়েছেন ফাতেমা ও আফরোজা নামে দুই গৃহবধু। তারা সম্পর্কে শ্বাশুড়ি-বউ। আর এতে সহোযোগিতা করেছেন গৃহকর্তা ও ফাতেমা বেগমের স্বামী মো: নাসির উদ্দিন।
গৃহবধু ফাতেমা বেগম বলেন, “পুকুরের পাড়ে আম বাগানের নিচে আদা চাষ করেছি। এই জমিতে আগে কোন ফসল হতো না, জঙ্গল লেগে ছিল। সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে আমরা আদা চাষ করেছি। বাড়ির সংসাররের কাজ বজায় রেখে ছেলের বউকে সাথে নিয়ে আদা চাষ করেছি। পাশের পুকুর পাড় থেকে পানি উত্তোলন করে নিয়মিত আদা গাছে সেচ দিয়েছি এবং গোবর, নিয়মিত দিয়েছি। আশা করছি আল্লাহর রহমতে আমরা ভালোই লাভবান হবো।”
অপর গৃহবধু আফরোজা বলেন, “আমরা গৃহকাজের পাশাপাশি রেখে আদা চাষ করেছি। নিয়মিত পানি দেওয়া, নিড়ানির কাজ, সার ও জৈব সার আদার বাগানে দিয়েছে। এই আদা চাষে কৃষি অফিস থেকেও আমরা সহোযোগিতা পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ আমরা লাভবান হবো।”
গৃহকর্তা মো: নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি কৃষি অফিসের ট্রেনিং এ গিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখানো হয়। তার মধ্যে আমি আদা চাষ করতে আগ্রহী প্রকাশ করি। তারপরে আমি আমার পুকুর পাড়ে আম বাগানের নিচে অনাবাদি জমিতে এক হাজার বস্তায় আাদ চাষ করি। এতে কৃষি অফিস থেকে প্রায় আনুমানিক মূল্য ৫০ হাজার টাকার মতো কৃষি সামগ্রী দিয়ে সহোযোগিতা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে এক হাজারটি বস্তা, ৫০ কেজি বীজ, সার ও একটি মেশিন। এরপরে আমি তাদেকে (স্ত্রী ও ছেলের বউকে) সমস্ত কিছু তৈরি করে দিয়েছি। তারা আদা বাগানের যন্ত ও দেখাশুনা করেছে। আমি শুধু তাদেকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা আদা বাগানে নিয়মিত পানি, আগাছা উত্তোলনসহ যাবতীয় কাজ করেছে।
তিনি আরোও বলেন, আমি আশা করছি এক হাজার বস্তাতে প্রায় দুই হাজার কেজি মাল (আদা) হবে। তার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা পাবো বলে মনে করি।
নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, “এই প্রদর্শনীতে সার, বীজ, বালাইনাশকসহ যাবতীয় কিছু নাচোল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দিয়েছি। আদা চাষ এই প্রদর্শনীটি বাস্তাবায়ন করতে কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করেছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের একটি বড় প্রভাব রয়েছে এবং বড় বড় আম বাগান আছে। এই আম বাগানগুলো কিভাবে ব্যাবহার করতে পারি, সেজন্যই একটি বাস্তব উদারহণ এই গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে এবং এখানে এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। একই ভাবে আমরা আম বাগানে আদা চাষ করতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, আদা একটি মসলা জাতীয় ফসল। আর এই ফসলটি আমাদের ভারত, চীন বা মিয়ানমার থেকে আমদানি করতে হয়। তাই আমরা যদি আমাদের এই অঞ্চলের আম বাগানগুলোকে পতিত না রেখে এইভাবে বস্তায় আদা চাষের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের দেশ আদায় স্বয়ংসম্পূর্ন হবে, পাশাপাশি আদা আমরা রপ্তানীও করতে পারবো। সেদিক থেকে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন হয়েছে।
মো: আশিক আলী/এসএমডব্লিউ