গাছ চাপায় স্বামীর মৃত্যু, ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের মানবেতর জীবন
মানুষকে দেখলে হাসিমুখে কথা বলতেন মো. আমির হোসেন। কারো সঙ্গে কখনো রাগ করতেন না। নছিমনে সবজি একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যা পেতেন তা দিয়ে চলতো তার সংসার। বাড়িতে স্ত্রী আর তিন ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ঝুপড়ি ঘরে। গাছের চাপা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় আমির হোসেনের। তারপর থেকে ঝুপড়ি ঘরে অনাহারে দিন কাটছে স্ত্রী-সন্তানদের।
আমির হোসেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের মৃত মো. ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমির হোসেন পিকআপের চালক ছিলেন। অন্যের গাড়ি ভাড়া নিয়ে সবজি টেনে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ভয়াবহ বন্যায় এলাকার সব সবজিখেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শুরু করেন গাছ টানার কাজ। অন্যান্য দিনের মতো গত ২৬ সেপ্টেম্বরও আমির হোসেন একটি পিকআপ ভাড়া নিয়ে অন্যের গাছ টানার কাজ নেন। কিন্তু অসাবধানতার কারণে সেদিন একটি গাছ উত্তোলনের সময়ে সেই গাছের নিচেই চাপা পড়েন তিনি। গাছের চাপায় তার মস্তক থেঁতলে যায়। তাৎক্ষণিক মারা যান আমির হোসেন। এরপর থেকে তার স্ত্রী-সন্তানের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। একদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন তারা। অন্যদিকে অর্ধাহারে-অনাহারে ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমির হোসেন গরিব হলেও কখনো নিজের অভাবের কথা কাউকে বলতেন না। কর্ম করে খেতেন। পেটে খাবার না থাকলেও হাসিমুখে কথা বলতেন। তিনি পরিবার নিয়ে একবেলা খেয়ে দিন পার করেছেন। বর্তমানে তার স্ত্রী তিন ছেলেকে নিয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন।
আমির হোসেনের প্রতিবেশী নুর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন অনেক গরিব এলাকা কিন্তু এত খারাপ ঘর আর কারো নাই। আমির হোসেন পরিবারসহ একটা ঝুপড়ি ঘরে হাস-মুরগির সঙ্গে ঘুমাতেন। ছেলেরা সব অবুঝ। তাদের স্কুলের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গেছে।
আমির হোসেনের শ্বশুর মো. আলি মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জামাই স্ত্রী ও তিনটা ছেলে রেখে মারা গেছেন। বর্তমানে তারা খুব কষ্টে আছে। আমার তো সামর্থ্য নাই। আমি কিছু করতেও পারছি না। যদি তাদের একটা ঘর থাকতো তাহলেও কথা ছিল। ঘর নাই আবার পেটেও খাবার নাই। মরে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।
আমির হোসেনের স্ত্রী আয়েশা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো অনেক কষ্ট করেছি। স্বামী থাকতেও কষ্ট আর এখন স্বামী নাই তাই কষ্টের শেষ নাই। ভবিষ্যতে কি হবে তা বুঝতে পারছি না। সব কিছু অন্ধকার মনে হয়। ছেলেদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার সন্তানদের যদি একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো তাহলে আমি মরে গেলেও শান্তি পেতাম।
সুবর্ণচর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জেনেছি আয়েশা বেগম সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবো। যেন আয়েশা বেগম সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। সন্তানরা যেন পড়ালেখা করতে পারে। আমরা সমাজসেবা অফিস আয়েশা বেগমকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনতে চাই। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ বন্ধ আছে। অনলাইন আবেদন চালু হলে আবেদন করলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
হাসিব আল আমিন/এএমকে