পটুয়াখালীতে কোয়েল পালনে নাহিদের বাজিমাত
পটুয়াখালীর তরুণ উদ্যোক্তা নাহিদ। শখের বসে কোয়েল পালন শুরু করলেও তিনি এখন বনে গেছেন পরিপূর্ণ খামারি। ৩ বছর আগে মাত্র ১৬টি কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করেন এ যাত্রা। বর্তমানে তার খামারে কোয়েল আছে চার হাজারের বেশি।
বর্তমান সময়ে যেখানে মাদক আর অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ, ঠিক সে সময়ে নাহিদ নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির খামার। নাহিদের এই সাফল্য এলাকার বেকার যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে। তার এলাকায় অনেকেই এখন কোয়েল পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাহিদ তার কোয়েলের খামারে কাজ করছেন। নাহিদ পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের হেতালিয়া বাধঘাট এলাকার বাসিন্দা মাঈনুল ইসলাম স্বপনের ছেলে।
আরও পড়ুন
নাহিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শখের বসে বাজার থেকে প্রথমে কিছু কোয়েল পাখি কিনে বাসায় একটি খাঁচায় রেখে পালন করতেন নাহিদ। শুরুর দিকে পরিবার থেকে সমর্থন না পেলেও আজ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নাহিদ প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে তার দুইটি খামারে চার হাজারের বেশি পাখি আছে। পাখিদের খাবার দেওয়া, পরিচর্যা এবং ডিম সংগ্রহের কাজ তিনি নিজেই করেন। প্রতিদিন নাহিদের খামার থেকে প্রায় তিন হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৩ টাকা দরে।
খামারি হয়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. নাহিদ ইসলাম ঢাক পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল। শখের বসে মাত্র ১৬টি কোয়েল এনে পালন শুরু করি। পরে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম কোয়েল পালন সহজ ও লাভজনক। যখন জানতে পারলাম কোয়েলের ডিম এবং মাংসে ব্যাপক পরিমাণে পুষ্টি আছে, তখন ব্যাপকভাবে এর লালন পালন শুরু করলাম। ইনশাআল্লাহ সফলতাও পেয়েছি। আজ আমার খামারে চার হাজারের বেশি কোয়েল পাখি আছে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আমি আগামীতে পটুয়াখালী ও এর আশেপাশের এলাকায় শতাধিক নতুন খামারি তৈরি করবো। ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ভবিষ্যতে হয়ত আমরা সবাই মিলে আরও ভালো কিছু করতে পারবো।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সাইদ হাসান বলেন, অন্যান্য পোলট্রির তুলনায় কোয়েলের মাংস এবং ডিম গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট। আনুপাতিক হারে কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং আমিষ বেশি। কোয়েল পালনের সুবিধা হচ্ছে যে কোয়েল দ্রুত বাড়ে। একটি পাখি বছরে ২৫০-২৬০টি ডিম দেয়। কোয়েল পালনে রোগবালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে। বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের উপযোগী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পালন আমিষের ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমানে জেলায় কোয়েলের ডিম ও মাংসের চাহিদার সিংহভাগের জোগান মেলে নাহিদের খামার থেকে। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের চাহিদা বাড়ছে। কোয়েল পাখির মাংস খেতে সুস্বাদু হওয়ায় হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতেও এর জনপ্রিয়তা বেশ। নাহিদের এই উদ্যোগ স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে।
এফআরএস