পরকীয়ার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা!
স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত, একইসঙ্গে নেশায় ডুবে থাকতেন। এসব বিষয় নিয়ে দাম্পত্য জীবন ও পরিবারে বিবাদ লেগেই থাকত। বিয়ের দুই বছরের মাথায় শারমীন চলে আসে বাপের বাড়ি। গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে তাকে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে সুখ ধরা দেয়নি শারমীনের কপালে। একইসঙ্গে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন শারমীন আক্তার (২৪) এবং তার দুই শিশু সন্তান রওজা (৫) ও নওরিন (৩)।
শারমীনের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরকীয়ার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে আরও বেশি সন্দেহ হচ্ছে।
পুলিশ, পবিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় আট বছর আগে জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কদু মিয়ার মেয়ে শারমীনের সঙ্গে সদর উপজেলার ঘাটুরা গ্রামের সরকার বাড়ির মারাজ মিয়ার ছেলে আশরাফ আলীর বিয়ে হয়। আশরাফ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের একজন কর্মচারী। নেশা ও চারিত্রিক সমস্যা থাকায় আশরাফের সঙ্গে প্রায়ই শারমীনের বিবাদ হতো। এ ছাড়া সংসার চালানোর খরচ নিয়েও ঝামেলা হতো।
শারমীনের বাবা কদু মিয়ার অভিযোগ, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবেই স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শারমীনকে হাসপাতালে দিয়ে তার স্বামী আশরাফ পালিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। পাশাপাশি এটাও জানান যে, বিয়ের দুই বছর পর্যন্ত তার মেয়ে স্বামীর ঘরে ভালোই ছিল। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। আশরাফ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে বিরোধ বেড়ে যায়।
শারমীন আজ বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসবে বলেছিলো বলেই কেঁদে দেন কদু মিয়া।
শারমীনের ফুফাতো ভাই মো. নাদিমুল ইসলামও এ ঘটনার জন্য আশরাফকে দায়ী করেন। এক ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানান।
শারমীনের দুলাভাই মো. খসরু মিয়া জানান, বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বামীর সঙ্গে শারমীনের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর আশরাফের পরিবারের অনুরোধে গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় শারমীনকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। তবে পরকীয়া নিয়ে শারমীন ও আশরাফের বিরোধ দেখা দেয়। এরই জেরে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজাহিদ সরকার ও রাসেল সরকার জানান, পারিবারিক সমস্যা থাকলে ওই নারী সমাজের লোকজনকে না জানিয়ে যেটা করেছেন সেটা মর্মান্তিক। ঘটনার পর থেকে ওই নারীর স্বামীসহ অন্য স্বজনরা পালিয়ে গেছে। এমন ঘটনায় তারা শোক প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে আশরাফ আলী ও তার বাবার ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তানভীর আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
মাজহারুল করিম অভি/এমজেইউ