সালিশে চুল কেটে দেওয়ায় আত্মহত্যা চেষ্টা, ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ২
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে সালিশ বৈঠকে এনামুল খান (২২) নামে এক যুবককে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টিতে অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই যুবক। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চরভদ্রাসনের সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামে করা সালিশ বৈঠকে ওই যুবকের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী এনামুল সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।
এনামুলের ছেলে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এনামুল গত ১০ নভেম্বর মোটরসাইকেলে করে বাড়ি আসার পথে একটি গো শাবকের (গরুর বাছুর) সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাছুরের মালিক ওই গ্রামের বাসিন্দা টুকু প্রামাণিকে সঙ্গে সালিশ বৈঠক করে দেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান। সালিশে এনামুলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।তবে শুধু টাকা জরিমানার শাস্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তিন নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধা। সালিশ চলাকালে সরোয়ার মৃধা পাশের এক দর্জির দোকান থেকে কেচি এনে এনামুলের মাথার চুল কেটে দেন। এ সময় এবং অন্যান্যরা তাকে নানাভাবে অপদস্থ করতে থাকেন। সালিশ শেষে বাড়ি ফিরে আর কারো সঙ্গে কথা বলেননি এনামুল। পরের দিন বুধবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ এনামুল তার ঘরের দরজা বন্ধ করে গামছা দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে পড়েন।
পরে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখে বাড়ির লোকজন এনামুলকে উদ্ধার করে প্রথমে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে তার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দিনি আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন
পরিবারের অভিযোগ, সালিশে করা খারাপ আচরণের কারণে লজ্জা ও অভিমানে এনামুল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
চুল কাটার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান বলেন, সালিশে একটু শাসন করা হয়েছিল মাত্র। এনামুল অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালান। এ কারণে তার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এই জরিমানা করা হয়েছিল। তবে এত টাকা তার কাছ থেকে নেওয়া হতো না।
চুল কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ বলেন, ইউপি সদস্য হঠাৎ আবেগের বসে এ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে তাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল গাফফার বলেন, সালিশের ঘটনা নিয়ে এনামুলের চাচা রাজা মিয়া বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ বাছুরের মালিক টুকু প্রামাণিক ও ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে আজ বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
জহির হোসেন/এফআরএস