‘আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করলে, আপনাদের পালানোর জায়গা থাকবে না’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, আপনাদের উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগ নিয়ে চারিদিকে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আমরা আশা করি উপদেষ্টা পরিষদে বাংলাদেশের কৃত্বিবান পুরুষ ও মহিলাদেরকে বাছাই করে নিয়োগ দেবেন। কিন্ত যারা বিগত সময়ে ফজিলাতুন্নেছার ভূমিকায় সরব ছিল আবার কেউ বিগত সরকারের দোসর ছিল তাদেকে নিয়োগ দিচ্ছেন। এটা নিয়ে জনগণের ভেতরে অসন্তষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি সমর্থন কেড়ে নেই, তাহলে পালানোর জায়গা আপনাদের থাকবে না। এই সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে যদি আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেই তাহলে আওয়ামী লীগ কিন্ত আপনাদের টুকরো টুকরো করে ফেলবে। তাই আপনারা জনগণকে বয়ান না শুনিয়ে আপনাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য পরিষ্কার করেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চারবাগডাঙ্গা হাই স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে নির্বাচন ও সংস্কারের রোড ম্যাপের দাবিতে আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদকে সমর্থন দিয়েছি। এই সরকারের ব্যর্থ হওয়া যাবে না। তবে সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হতে হবে কারণ আমাদের কাছে সন্দেহ হচ্ছে। আপনার যদি অন্য কোনো এজেন্ডা বা উদ্দেশ্য নিয়ে পথ চলতে চান তাহলে এই দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি তা কখনো মেনে নেবে না। আমরা লক্ষ্য করছি আজকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন বয়ান দিচ্ছেন। আপনাদের মতো শেখ হাসিনাও গত ১৫ বছর বয়ান দিয়েছিল উন্নয়ন না গণতন্ত্রের। এই আওয়াজ দিয়ে তিনি গত ১৫ বছর মানুষের ওপর জুলুম করেছেন। আর আপনারা আজকে নতুন স্লোগান তুলেছেন আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন। সংস্কার নাকি নির্বাচন এই কথা বলে নির্বাচনকে দূরে সরানো যাবে না। একটি নির্বাচিত শক্তিশালী সরকার ছাড়া দেশের সংকটের সমাধান হবে না। সুতরাং সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিতে হবে। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করছি সংস্কার কমিশনের রির্পোট দেবে। সেই রির্পোট অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরাই সংস্কার কার্যক্রমগুলো পার্লামেন্টের মাধ্যমেই কার্যকর করবে।
আরও পড়ুন
বিগত পতিত আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করে দীর্ঘ ১৫ বছর এই দেশের মানুষের ওপর অন্যায় ও জুলুম করেছে। অসংখ্য মানুষকে গুম, হত্যা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন ঘরছাড়া করে রেখেছিল। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই দেশের জাতীয় নেতাদের হত্যা করেছিল। আর তার ওপরে আল্লাহর ফায়সালা দেখেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে ভারত পালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি পালিয়ে গিয়ে হইতো প্রাণে বেঁচেছেন কিন্ত আওয়ামী লীগকে কবর দিয়ে গেছেন স্থায়ী ভাবে।
এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশে রাজনীতি করতে পারবে কিন্ত তার আগে গণহত্যা, সম্পদ লোটপাটের বিচার করতে হবে। এটা আমাদের পরিষ্কার বার্তা। শেখ হাসিনা যেই আইন দিয়ে দেলাওয়ার হোসেন সাইদী, আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ যাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর নাম করে ফাঁসি দিয়েছিল সেই আইনেই আমরা তাদের বিচার করব। সেই অপরাধগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় সাজানো নাটক, আর এখন জুলাই-আগস্ট মাসে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে তার বিচার হবে। কারণ তার আলামত ও সাক্ষী আছে। সুতরাং এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
হেফাজতে ইসলামের গণহত্যার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি ও যে বিভ্রান্ত ছড়ানোর হচ্ছে তার প্রতিবাদে সমাবেশ ডেকেছিল। ব্লগাররা ইসলামের বিরুদ্ধে ও নবীর (সা.) এর বিরুদ্ধে যে কটুক্তি করছে তাদেকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আর সেই রাতে অপরাশেন চালিয়ে মাদরাসার ছাত্র ও আলেম জনতাকে তারা হত্যা করেছিল, তার জবাবও হাসিনাকে দিতে হবে। গত ১৫ বছর তারা কোরআনের মাহফিলে বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আপনার মন খুলে মাহফিল করতে পারছেন।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাসিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকদলের আহবায়ক তসিকুল ইসলাম তসি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তাবিউল ইসলাম তারিফ, তাঁতী দলের জেলা সভাপতি আতাউর রহমান, সদর উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মেজর ডালিম, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সারোয়ার জাহান ও সাবেক সহ-সভাপতি মীম ফজলে আজিম, শাহাজানপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুকুল হোসেন, আরও অনেকে।
আশিক আলী/আরকে