ডাবল মার্ডার মামলায় খালাস পেলেন এসপি কোহিনূর
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ডাবল মার্ডার মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন তৎকালীন আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) কোহিনূর মিয়া এবং সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বল। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাবরিনা আলী এ রায় দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম.এ হান্নান খান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ৬ মাস ৩ দিন পর আইনি লড়াই শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় দেন। এতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন আসামিরা।
এর আগে ২০০৪ সালের ৫ মে পৌর নির্বাচনে নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সুজন ও আবু তাহের নামে দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার কোনো মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে নান্দাইল থানায় মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ কয়েক দফা তদন্ত শেষে আসাম শনাক্ত না হওয়ায় তিন বার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভূইয়া নান্দাইলের সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশ সুপার কোহিনুর মিয়া ও পৌর মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বলসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে পুনরায় মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশে নান্দাইল থানা পুলিশ মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রমাণ না হওয়ায় ওই বছরই তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। এ ঘটনার কিছুদিন পর নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেন। এরপর ওই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভূইয়া নারাজি দিয়ে ২০০৮ সালে জেলা জজ আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালতের বিচারক মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর সিআইডি ২০১১ সালে এসপি কোহিনূর মিয়া ও নান্দাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বলের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের বেকসুর খালাস দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রায় ঘোষণার সময় আসামি আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে মামলার শুরু থেকে পলাতক ছিলেন অপর আসামি এসপি কোহিনূর মিয়া।
মামলার অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান মুকুল বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিরপরাধীদের এই মামলায় আসামি করে অবিচার করা হয়েছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আসামিরা ন্যায়বিচার পেয়েছে। এর ফলে পুলিশ সুপার কোহিনূর মিয়ার চাকরিতে যোগদানের আর কোনো আইনি বাঁধা নেই বলেও জানান এই আইনজীবী।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর