আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৯, বাড়িঘর ভাঙচুর
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ১৭ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তুজারপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সরইবাড়ি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে গ্রুপ দুটি নিজ বংশের নামে 'তালুকদার গ্রুপ' ও 'খান গ্রুপ' নামে পরিচিতি।
তালুকদার গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সরইবাড়ি গ্রামের বাবুল তালুকদার (৭০) ও খান গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সরইবাড়ি গ্রামের কবির খান (৫৫)।
দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। দুই গ্রুপের কয়েকশ লোক রামদা, ঢাল, সুরকি, ইট, পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তালুকদার গ্রুপের আবু জাফর নামে একজন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সপ্তাহ-খানেক আগে খান গ্রুপের লোকজন আমাদের লোকজনের পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যান। এরপর আমরা ফরিদপুর আদালতে মামলা করি। রোববার মামলার কপি উঠায় খান গ্রুপ। এরপর মামলায় তাদের নাম দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে রোববার বিকালে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এর জেরে সোমবার সকালে তারা আমাদের ওপর আক্রমণ হামলা চালান।
খান গ্রুপের শরীফ খান বলেন, তালুকদার গ্রুপের লোকজন বেশ কয়েকদিন আগে আমাদের পক্ষের মহিউদ্দিনকে একেবারে বিনা-কারণে মারপিট করেন। এ ছাড়া তিন দিন আগে তারা আমাদের পক্ষের লোকজনের সরইবাড়ি গ্রামের তিনটি দোকান ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি কয়েকটি নৌকা ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। সোমবার সকালে তালুকদারদের পক্ষের লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আহত বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুই পক্ষের সমর্থকরাই রয়েছেন।
এরা হলেন—হাসমত হাওলাদার (৬৫), আবুল হোসেন মাতুব্বর (৬০), লতিফ হাওলাদার (৬০) রাজু চৌধুরী (২৯), জুবায়ের হাওলাদার (৩২), পান্নু মাতুব্বর (৫০), ওবায়দুর রহমান (৪০), রসমত হাওলাদার (৪৪), আবু জাফর হাওলাদার (৪৩), রুবেল চৌধুরী (৩৫), মিন্টু খান (৪৪), নাসির চৌধুরী (৪৪), শরীফ খান (২৭), রফিক চৌধুরী (২৭), রুবেল হাওলাদার (৩৫), ইয়াসিন (২৩)।
তুজারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য সদস্য রোমানা খানম বলেন, গত কয়েকদিন আগে তালুকদার পক্ষের লোকজন খান পক্ষের এক ব্যক্তিকে মারপিট করে। সোমবার সকালেও তালুকদাররা খান পক্ষের লোকজনের ওপর প্রথমে আক্রমণ করে। এ সময় খান পক্ষের মিন্টু খান ও ফারুক খানের বাড়ি ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষ।
ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শারমিন সুইট বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত রোগীরা ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন। পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ১৭ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অধিকাংশের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমি-সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে তালুকদার ও খান পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
জহির হোসেন/এএমকে