ফ্যাসিবাদের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে
শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আগস্ট বিপ্লবের পর গত তিন মাসে পতিত শেখ হাসিনা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়। ৫ আগস্টের চেতনায় জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই অপশক্তিকে আমরা মোকাবিলা করব।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগ, সংবিধান ও প্রশাসনের মৌলিক সংস্কার ছাড়া সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে অডিও-ভিডিও প্রকাশ করে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা। নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে এক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে ফ্যাসিবাদী দল। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে তা প্রশাসন ও ছাত্র-জনতা নস্যাৎ করে দিয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যতই দেশের বাইরে থেকে চক্রান্ত করা হোক, যতই মিথ্যাচার করা হোক, প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জাতিকে অস্থির করার চেষ্টা করা হোক, আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদকে চিনেছে, ফ্যাসিবাদী দলকে চিনেছে, ফ্যাসিবাদের মাস্টারমাইন্ডকেও চিনেছে। তাদেরকে এ দেশের মানুষ আর কখনো গ্রহণ করবে না।
তিনি সকলকে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ছাত্র-জনতাও রাত থেকে রাজপথ পাহারা দিচ্ছেন। সারা দেশের মানুষকে পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রশাসনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর আছে জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, আইন উপদেষ্টা ড. প্রফেসর আসিফ নজরুলকে সুইজারল্যান্ডে হেনস্তা করা হয়েছে। সেখানে তার সিকিউরিটি কোথায়? তার প্রটোকল কোথায়? সেদেশে নিযুক্ত অ্যাম্বাসেডর কোথায়? বিদেশের মাটিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে যেসব অশ্লীল কথাবার্তা বলা হয়েছে তাতেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চরিত্র ফুটে উঠেছে। এমনিভাবে বিগত ১৬ বছরে দেশের মানুষ আওয়ামী বর্বরতা দেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয় উল্লেখ করে তিনি সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ সব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষী ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, দেশ-বিদেশ থেকে একটি চক্র বলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। পুজার সময় অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। এ জন্য জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ছোট করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে অন্য ধর্মের লোকেরা নিরাপদ নয় এবং বাংলাদেশ এখন মৌলবাদীরা চালাচ্ছে বলে তারা মিথ্যাচার করেছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। জনগণের উত্তাল ক্ষোভের মুখে যারা পালিয়েছে পতিত সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে এই জাতি আরও কখনো গ্রহণ করবে না।
খুলনা প্রেসক্লাবের মতো একটি দল-মতের ঊর্ধ্বের প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলায় বিচলিত ও বিস্মিত হন তিনি। খুলনা প্রেসক্লাবের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি অনুদানে একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পেতে প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটিকে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত হবো। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক ও সদস্যসচিব রফিউল ইসলাম টুটুলসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও ক্লাবের সিনিয়র সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ক্লাবের সদস্যসচিব রফিউল ইসলাম টুটুলের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক ও সদস্যসচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সরকারি পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরীর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজি, ছাত্রশিবিরের মহানগরী সেক্রেটারি এসএম নুরুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য ক্লাবের উন্নয়নে ক্লাবের কর্মকর্তাদের হাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে পাঠানো তিন লাখ টাকা হস্তান্তর করেন।
মোহাম্মদ মিলন/এমজেইউ