মুন্সীগঞ্জে ইলিশের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙাশ
ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ৩ নভেম্বর। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও মুন্সীগঞ্জের বাজারগুলোতে সেভাবে ফিরেনি ইলিশ। মুন্সীগঞ্জের বাজারগুলোতে প্রতি বছর মা ইলিশ মাছ নিধন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার পরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও এ বছর তেমন দেখা মিলছে না ইলিশের। ফলে এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে ইলিশের দাম।
নিষেধাজ্ঞার পরে জেলেরা জাল নিয়ে নদীতে নামলেও ইলিশ ধরার জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরছে বড় বড় পাঙাশ। এতে পাঙাশের বাজারে স্বস্তি ফিরলেও স্বস্তি ফিরেনি ইলিশের বাজারে। সরবরাহ কম থাকায় ইলিশের দামও অনেক বেশি। আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ছয় দিন পরেও দাম বেশি থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগরের মাছ মুন্সীগঞ্জে না আসায় এবং নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় দাম বেশি। তবে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে মুন্সীগঞ্জসহ পাশের শরীয়তপুর মাদারীপুর জেলার সীমানাধীন পদ্মানদীতে জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশ না পেলেও পাঙাশ পাচ্ছেন জেলেরা। আর সেই পাঙাশ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি জেলেরা। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার , শুক্রবার ও শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, হাসাইল ও দিঘিরপাড় মৎস্য আড়তে ৪ কেজি থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ কেজি ওজনের পাঙাশ বিক্রি করেছে জেলেরা। ৮০০-১০০০ টাকা কেজি দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। একই দামে আড়তদারদের কাছ হতে কিনতে পারছেন সাধারণ ক্রেতারাও।
হাসান ছৈয়াল নামের এক জেলে জানান, ইলিশের অভিযান শেষে হলে নদীতে ইলিশ মাছের জাল নিয়ে মাছ ধরতে যাই। এ সময় ইলিশ না এসে বড় বড় পাঙাশ আসে। আড়তগুলোতে ভালো দাম পাওয়ায় আমরা খুশি।
হাসাইল মৎস্য আড়তের আড়তদার বাবু হাওলাদার বলেন, প্রতি বছরেই এই সময় জেলেরা পদ্মা নদীতে বড় বড় পাংগাস পেয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এ বছর অভিযানের পরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর হাসাইল আড়তের এক জেলে একবার নদীতে জাল ফেলে সর্বোচ্চ ৮০ পিস পাঙাশ পেয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত হাসাইল মাছ ঘাটে প্রায় ৫ শতাধিক পাঙাশ মাছ উঠেছে।
গনেশ নামের ক্রেতা বলেন, ৯৫০ টাকা দরে ১১ কেজি ওজনের একটি পাংগাশ কিনলাম। নদীর পাংগাশ খেতে খুবই সুস্বাদু তাই ভোরে আড়তে এসেছি পাংগাশ কিনতে। পছন্দমতো কিনে নিলাম।
তবে পাঙাশের বাজারে ক্রেতার স্বস্তি মিললেও নাভিশ্বাস উঠেছে ইলিশের বাজারে। শনিবার (৯ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাওয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, ৭-৮শ গ্রামের ইলিশ ১৫০০ টাকা, ৫শ গ্রাম ওজনের মাছ ১২০০ টাকা কেজি, ৩-৪টিতে কেজির মাছ ৮০০-১০০০ টাকা এবং ৫-৬টিতে কেজির মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে থাকা অন্য মাছের ওপরও। অন্যান্য মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও একমাত্র নদীর পাঙাস মাছ ছাড়া দাম কমেনি অন্য কোনো মাছের। বরং রুই, কাতলা, চিংড়ি ও ট্যাংরা পুটি মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাসকার্পসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮-৯শ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞার পরে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটের প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরেছে। শিমুলিয়া ঘাটে ইলিশ প্রেমীদের ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম বেশি বলছেন ইলিশ ক্রেতারা। ঘাটে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। তারপরেও ইলিশ প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শখের হাড়ি রেস্তোরাঁয়। শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যায় সব ধরনের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
জুয়েল হোসেন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই মাওয়ায় ইলিশ খেতে আসি। নিষেধাজ্ঞার সময় এখানে ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকে। তাই এবার অনেকদিন পর আসলাম। কিন্তু ইলিশের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
জুবায়ের নামের এক ক্রেতা বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ কিনতে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটে আসছিলাম। কিন্তু দাম অনেক বেশি। তাই ইলিশ না কিনে বন্ধুরা মিলে পাঙাশ মাছ কিনলাম। বড় পাঙাশ কেটে ভাগ করে নিয়ে যাচ্ছি। ইলিশের দামের যে অবস্থা দাম যদি এমন থাকে বেশিরভাগ মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না।
মাছ কিনতে আসা এক নারী বলেন, ইলিশের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে স্বল্প আয়ের মানুষরা ইলিশ ক্রয়ের কথা চিন্তাও করেন না। এজন্য ইলিশসহ বেশি দামের বড় মাছ কেটে যদি টুকরো করে বিক্রি করা হতো, তাহলে হয়ত অনেকেই এই মাছের স্বাদ নিতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন ওই নারী।
মুন্সীগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি।
ব.ম শামীম/আরকে