খালের পাড় রক্ষায় নেই স্থায়ী উদ্যোগ, ঝুঁকিতে পৌরসভার দুটি সড়ক
বরগুনা পৌরশহরের প্রাণ কেন্দ্রে থাকা ভাড়ানি খালটি খননের কয়েক বছর পার হলেও নেওয়া হয়নি দুই পাড় রক্ষায় কোনো উদ্যোগ। এতে বারবার সংস্কারের কাজ করলেও মাত্র তিন চার মাসের মধ্যে দুই পাড়ের সড়ক ভেঙে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন পৌরসভার বিভিন্ন গাড়ি চালক, পথচারী ও স্থানীয়রা।
তবে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরহা মেলেনি বলে জানিয়েছেন বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদালতের নির্দেশনায় ২০১৯ সালে বরগুনা পৌর শহরের একদম প্রাণ কেন্দ্রে থাকা ভাড়ানি খালের দুই পাড়ের প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে খালটির পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালে খনন কাজ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই খালটি খনন করা হলেও খননের পর দুই পাড় রক্ষায় নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনো উদ্যোগ। এতে ওই খালের দুই পাড়ের সড়ক ভেঙে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীসহ বিভিন্ন গাড়ি চালকদের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনে সৃষ্টি হচ্ছে ভোগান্তি। ভাঙনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভাড়ানি খালটির ওপরে থাকা বিভিন্নস্থানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতু। তবে খালটির ভাঙন রোধের চেষ্টায় সাময়িকভাবে বাঁশ ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হলেও রোধ করা যাচ্ছে না ভাঙন। এতে দুই পাড়ের সড়ক বারবার সংস্কার করলেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তা ভেঙে গিয়ে আবারও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন
ভাড়ানি খালের পাড়ের শাহেদ ওলি নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাড়ানি খালটি খননের পর স্থায়ী কোনো গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়নি। এর ফলে রাস্তার কাজ করা হলেও আবার তা ভেঙে যাচ্ছে। বাঁশ দিয়ে যে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে তা অস্থায়ী, বর্ষা মৌসুম এলেই ভেঙে যায়। মাত্র তিন চারমাস পূর্বে রাস্তার সংস্কার করা হয়েছিল, এখন আবারও তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বারবার সংস্কার করায় শুধু রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে, সাধারণ নাগরিকদের কোনো উপকারে আসছে না।
মো. সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন খালটি খনন করা হয় তখনই দুই পাড়ের রাস্তা ভেঙে যায়। পরে পৌরসভার মাধ্যমে রাস্তার কাজ করে, কয়েক মাসের মধ্যে আবারও তা ভাঙতে শুরু করে। স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।
বরগুনা পৌরসভার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পনি উন্নয়ন বোর্ড যদি এই খালটির সামগ্রিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতো তাহলে আর রাস্তা ভেঙে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতো না। বিশেষ করে খালের পাড়ের সড়কটি গত তিন মাস আগে সংস্কার করলে আবারও ভেঙে গিয়ে আগের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কাজটাকে আমরা রাষ্ট্রের সিস্টেম লসের একটি অংশ মনে করি। এ ধরনের সিস্টেম লস উন্নয়ন আমরা চাই না।
ভাড়ানি খালের দুই পাড়ের রাস্তা বারবার সংস্কার করলেও কেন দীর্ঘস্থায়ী হয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাড়ানি খালটিকে কিছুদিন পূর্বে খনন করেন। তবে খালের দুই পাড় সুরক্ষার যে ব্যবস্থা তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে খালের দুই পাড়েই ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কয়েকবারই চিঠি দিয়েছি। তবে তারা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। নদীর পাড় রক্ষার কাজ ও এ বিষয়ক প্রকল্পগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড করে, এগুলো তাদেরই কাজ।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাড়ানি খালটির বর্তমান অবস্থা জানতে আমরা একটি সার্ভে করব। আমাদের যারা অভিজ্ঞ ডিজাইন সার্কেল রয়েছে তাদের পরামর্শে এবং পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে খালটির ভাঙন রোধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আব্দুল আলীম/আরকে