জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পঙ্গু হয়ে নাঈমের দুর্বিষহ জীবন
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছেড়ে পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে রাজপথ দখলে নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতেছিল ছাত্র-জনতা। সেই বিজয় মিছিলে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন হাবিরুর রহমান নাঈম। কিন্তু ঠিক তখনই আচমকা এক গুলি নাঈমের জীবনের সব আনন্দ মলিন করে দেয়। শুরু হয় তার কালো অধ্যায় ও দুর্বিষহ জীবনযাপন।
নাঈম রংপুরের পীরগঞ্জ থানার মোনাইল গ্রামের রস্তম আলীর ছেলে। পোশাক শ্রমিক দম্পতির দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে নাঈম ছোট। থাকেন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় নিজাম কাজীর ভাড়াবাড়িতে।
দুর্বিষহ জীবনের কথাগুলো বলছিলেন নাঈম নিজেই। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট বিকেলে রাস্তায় অনেক লোক ছিল। সেখানে বিজয় মিছিল ও উল্লাস করছিল সবাই। আমিও বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। যখন আশুলিয়ার বাইপাইলে পৌঁছাই, তখন হঠাৎ গুলি করে পুলিশ। এ সময় আমার এক বন্ধুর শরীরে গুলি লাগে। ওই বন্ধুকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রিকশায় তুলছিলাম, এমন সময় একটি গুলি এসে আমার ডান পায়ে লাগে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরে আমাকে হাবিব ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য পরে আমাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর এনাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসকরা এক্সরে করে দেখেন যে আমার পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে। সেখানে রড় দিয়ে হাঁড় জোড়া লাগানোর জন্য প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাসের মতো চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসি। কিন্তু আমার পায়ে রড় এখনো লাগানো।’
আরও পড়ুন
এ সময় নাঈম তাদের পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা জানান। তিনি বলেন, দিন দিন আমার বাবা-মায়ের পক্ষে আমার ব্যয় চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে। আমিও কোনো কাজ করতে পারি না। ওষুধ ও ক্যালসিয়ামের জন্য দেওয়া খাবারগুলোর অনেক দাম। এখন আমার পরিবার খরচ করে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
নাঈমের নানা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে একটি গার্মেন্টসে অপারেটর পদে চাকরি করে আর মেয়ের জামাই একটি কারখানার লোডার পদে আছে। বাড়িভাড়া ও খাওয়া খরচের পর নাঈমের খরচ চালানো অনেক কষ্টের। এখন আমরা অনেক কষ্টে রয়েছি। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলাম থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলাম, আর কোনো সহযোগিতা পাইনি। কেউ খবরও নেননি নাঈমের। কীভাবে আছি, তা কেউ জানার চেষ্টাও করেনি বলে ক্ষোভ জানান তিনি।
লোটন আচার্য্য/এফআরএস