মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজিও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে, অস্বস্তিতে ক্রেতা
কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজির দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। করলা, ঝিঙা, চিচিংগা, কলা, পটল, বেগুন, পেঁপে, মিষ্টি কুুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি মেহেরপুরে উৎপাদন হলেও বাজারে দাম যেন কমছেই না।
ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় বছরে এ সময় মেহেরপুরের সব সবজির দাম কমে যায়। এবার দাম বেশি। এদিকে কৃষক বলছেন, বন্যা কবলিত জেলায় সবজি না হওয়ায় মেহেরপুরের সবজির চাহিদা বেড়েছে, তাই দামও বেশি।
মেহেরপুরে শীতের আগমনী বার্তায় বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও দাম এখনও কমেনি। আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। চড়া দামে আটকে আছে পেঁয়াজ। ডিম-মুরগির দাম কিছুটা স্থিতিশীল।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি। এছাড়া বেগুন, করলা ও কাঁকরোল ৮০-৯০ টাকা ও পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও সরবরাহ কম থাকলেও এসব সবজির দাম এমনি ছিল।
আরও পড়ুন
বাজারে ফুলকপি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাচাকলা ৫০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দুই সপ্তাহ আগেও ডিমের বাজার ছিল অস্থির। প্রতি ডজন ডিম ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এ ভোগ্যপণ্যটির দাম কমে ১৫০-১৫৫ টাকায় নেমেছে। তবে এ দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।
সবজি ক্রেতা হামিদুল ইসলাম বলেন, আমি দিনমজুর। একদিন কাজ হয়, একদিন হয় না। এতো দামে সবজি কিনে খাওয়া মুশকিল। দুই তিন ররকমের সবজি আর রসুন পেঁয়াজ কিনতে টাকা শেষ।
ক্রেতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরে সবজি ওঠার সময় দাম কমে যায়। এ বছর তার উল্টো হয়েছে। স্কুল শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, মাসিক যে বতন পাই তা দিয়ে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন। সবজির দামটা কমলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ ভিন্ন জেলায় রপ্তানি হওয়ায় চাহিদা বেশি, তাই দাম কমছে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কমে আসবে।
সবজি বিক্রেতা গাংনী বাজারের একরামুল হক বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে আমরা খুবই কম লাভে বিক্রি করছি। জেলার বিভিন্ন সবজি ভিন্ন জেলায় চলে যাওয়ায় কৃষকরা বেশি দাম নিচ্ছে।
ভাটপাড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মিলন ও আনারুল বলেন, কেবল শীত শুরু হচ্ছে। অনেক কৃষক আগাম সবজি লাগিয়েছিল। এখনও অনেক কৃষক সবজি আবাদ শুরু করেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি। তবে একযোগে সবজি উঠতে শুরু করলে দাম কমে যাবে।
বেগুন চাষি সাহারবাটি গ্রামের মুন্তাজ আলী জানান, সার, বিষসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কম দামে বিক্রি করা হলে আমাদের লোকসান হবে, তাছাড়া গাছে বেগুন কম ধরছে।
শ্যামপুর গ্রামের মুলা চাষি রহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে মুলা ক্ষেতে পচন ধরেছে। অনেকের জমির মুলা পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মুলার চাহিদা বেশি। তাই দাম একটু বেশি হলেও জেলায় সবজির ভরা মৌসুমে মুলা বিক্রি করতে হয় ৫ টাকা কেজি। তখন আমাদের লোকসান হয়।
পেঁপে চাষি ঢেপা গ্রামে তাপস বলেন, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এ বছর পেঁপে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে।
মেহেরপুর শহরের ডিম বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমেছে, যে কারণে এখন ডিমের দামও কমে আসছে। ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে শীতের নতুন সবজি পাচ্ছে।
জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরে জেলায় মরিচ আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর, কলায় ১ হাজার ৫৪৯ হেক্টর, বাঁধাকপি ৮৯৯ হেক্টর, শীতকালীন সবজি প্রায় ৩০০ হেক্টর, পেঁয়াজ ৩৪৫ হেক্টর। তবে সবজির আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মেহেরপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, আমরা সবজিসহ সকল পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং করছি। অসংগতি জরিমানা করছি। তবে বাজারদর বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোছা. সিফাত মেহনাজ বলেন, মেহেরপুর একটি কৃষিনির্ভর জেলা। এখানে সব ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। এখনও ভরপুর সবজি উঠতে শুরু করনি। যা উঠছে, তা জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলার বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছি। তবে ভরা মৌসুমে সবজির দাম কমে আসবে।
আরকে