রমেকের নতুন অধ্যক্ষকে সরাতে কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি
রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানের অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় আগামী মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে কর্মবিরতি পালনসহ কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন হাসপাতালের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে মঙ্গলবার থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল। এ সময় তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বর্তমান নতুন অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে না সরালে মঙ্গলবার হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে। তারপরও যদি দাবি না মানা হয় তাহলে বুধবার (৬ নভেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর কোনো চিকিৎসকের ঠাঁই রমেকে হবে না। নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরাসরি ছাত্রদের দমনে নিয়োজিত ছিলেন। এমন একজনকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়াটা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার সামিল।
এর আগে গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে নতুন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে রমেকের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সময়ের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলানোর জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি ও সেই সময়ের অধ্যক্ষ। এ ছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডা. মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন তার কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তার কক্ষে বসে থাকতো। এ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আপত্তি তুললেও সেসব কথা কানে তোলেননি তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা ৫ বছর উপাধ্যক্ষ ও ৪ বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডা. মো. মাহফুজার রহমান। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
এদিকে রোববার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সচেতন রংপুরবাসীর ব্যানারে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যাকে শাস্তি দিতে বদলি করে সেই মাহফুজার রহমান কীভাবে দোসর হয়। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের প্রশাসনের কথায় সায় না দেওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছিল। সেই চিকিৎসককে দোসর ফ্যাসিস্ট বলা হয় তা প্রতিহিংসামূলক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। রমেকের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষ পদে যোগদানে যেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা মেধার বিরুদ্ধে এক ধরনের নতুন বৈষম্য।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য দূর করতেই মেধার মূল্যায়ন করছেন। মাহফুজার রহমান তার মেধা ও যোগ্যতায় রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন। সরকার তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাকে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি দিয়েছে। কিন্তু মাহফুজার রহমান অধ্যক্ষ হওয়ায় বিগত সরকারের আওয়ামী লীগের দোসরা সুবিধা নিতে পারবে না বলেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে তাকে রংপুর থেকে অন্যত্র সরানোর পাঁয়তারা করছে। মাহফুজার রহমানকে রমেকের অধ্যক্ষ পদে যোগদানের বাধা দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে। পরের দিন বুধবার নতুন অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মচারী ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের একটি পক্ষ এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর