খুলনায় জাপার অফিস ভাঙচুরে ছাত্র-জনতা জড়িত নয় : মধু
জাতীয় পার্টির (জাপা) ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেছেন, খুলনায় জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে ছাত্র-জনতা কোনোক্রমেই জড়িত নয়। বরং যারা আমাদের পার্টি অফিসটি দখলে নিতে চায়, তাদের উসকানিতে তৃতীয় পক্ষ এ হামলা চালিয়েছে। সুতরাং হামলাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শনিবার খুলনার ডাকবাংলা মোড় এলাকায় অবস্থিত খুলনা জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঠিক মাগরিবের নামাজের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি ব্যানারসহ শতাধিক লোকের একটি মিছিল খুলনা জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে থাকা চেয়ার-টেবিল, ফ্যান, দুটি টিভি, জেলা ও মহানগর দপ্তর সম্পাদকের মূল্যবান কাগজপত্রসহ নগদ ২৫ হাজার ২৯০ টাকা লুটতরাজ করে নিয়ে যায় এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক নয় বছরের সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্যানা, ছবি, বর্তমান চেয়ারম্যানের ছবি, নেতাকর্মীদের ছবি, পার্টি অফিসের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা স্থান ত্যাগ করে। এ সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা ছিল নিষ্ক্রিয়। এমনকি আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক গাড়ি আসতে চাইলে তাদেরকেও বাধা দেওয়া হয়। এজন্য তারা বাধা উপেক্ষা করে আসলেও আগুন নেভাতে দেরি হয়। এতে জাতীয় পার্টির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরও প্রায় এক ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন এবং ছবি তুলে নেন ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খুলনার জাতীয় পার্টি অফিসে এই হামলা ছিল পরিকল্পিত। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমি নিজেই গত ১ নভেম্বর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এমনকি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা
সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও হামলার আশঙ্কার বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু এরপরেও কীভাবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটল সেটিই আমাদের প্রশ্ন। তাহলে কি ধরেই নেওয়া হবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পার্টিকে নিঃশেষ করার জন্যই এমন হামলা?
শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, গত ৩ জুলাই থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জাতীয় সংসদ এমনকি সংসদের বাইরেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। এমনকি রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার পর জাতীয় পার্টিই প্রথম ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরাই প্রথমে রাজপথে নেমেছি এবং মিছিল-মিটিং করেছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমাদের পার্টির দুজন কর্মী শহীদ হয়েছেন। জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মারুফসহ ১০/১২ জন নেতাকর্মী কারাভোগ করেছেন। আমাদের রংপুরের মেয়র নিজে তার কর্মী সাথে নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের মধ্যে খাবার সরবরাহ করেছেন এবং পানি বিলি করেছেন। এমনকি আলোচিত ঢাকার হেফাজত আন্দোলনেও জাতীয় পার্টির সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
খুলনার শিববাড়ি মোড়ে জাতীয় পার্টির নির্দেশে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি খুলনা মহানগর সদস্য সচিব দেশ আহমেদ রাজুর নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। যার ভিডিও ফুটেজ এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। কিন্তু এরপরও আমাদেরকে আওয়ামী লীগ তথা ফ্যাসিবাদের কথিত দোসর আখ্যা দিয়ে জনগণ থেকে জাতীয় পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। আমরা এ ঘটনার এবং পার্টি বিরোধী চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। সেইসঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের যেসব স্থানে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা হয়েছে, তার সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান গিয়াস বলেন, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি, তবে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর