গণভবনে রান্না হয়েছিল, কিন্তু রিজিকে ছিল না : টুকু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আল্লাহর কি অপার খেলা। আল্লাহ বলেছেন, “আমি নির্যাতনকারীকে পছন্দ করি না”। দেখেন, গণভবনে রান্না হয়েছিল কিন্তু শেখ হাসিনার রিজিকে ছিল না, হেলিকপ্টারে করে পালাতে হয়েছে। এখন পৃথিবীর কোনো দেশ তাকে স্থান দেয় না। ভারতে আশ্রিত হয়ে আছেন, কিন্তু কোনো কাগজ নাই। এগুলো কীভাবে হয়েছে? বিচার আল্লাহ করে দিয়েছেন।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শহীদ হওয়া সুমন, লতিফ ও রশিদের স্মরণে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার গয়লা ঈদগাহ মাঠে ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, আমি ভাবিনি আমার সিরাজগঞ্জের মাটিতে, আমার ভাই-বোনদের কাছে আবার ফেরত আসতে পারবো। ভেবেছিলাম, আমার সিরাজগঞ্জের মানুষ হয়তো আমাকে আর দেখতে পারবে না। হয়তো আমার মরদেহ আসবে, হয়তো আপনারা আমার জানাজা পড়বেন। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছি।
টুকু বলেন, আজকে আমি স্মরণ করতে চাই আবু সাইদকে, যে গুলির সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলেন। পুলিশ গুলি করেছে, তাও বুক পেতে দিয়েছিলেন। তাকে আবারও গুলি করা হয়। এরপর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেই ‘পানি লাগবে পানি’, কথাটা এখনো কানে বাজে। পৃথিবীতে প্রথম, যেখানে গণ-আন্দোলন থামাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করতে হয়েছে। হাজারো শহীদ হয়েছে, এরপর তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই শহরে আমি জন্মেছি, বড় হয়েছি। সেই বাড়িতে আসলে আমাকে গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে। চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকেছে, বলেছে উপরের নির্দেশনা আছে। কিন্তু আমার জীবনে কখনো দেখিনি কোনো সরকার আসলে মিটিং করতে দেয় না, ঘর থেকে বের হতে দেয় না। পাকিস্তানিরাও যা করেনি, আওয়ামী লীগ তা করেছে।
তিনি বলেন, ৭১-পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যা করেছে...; যদি যমুনা কথা বলতে পারতো তাহলে যমুনা বলতো কত মরদেহ এখানে ফেলা হয়েছিল, কত মায়ের বুক খালি করা হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ চারিত্রিকভাবেই ফ্যাসিস্ট। আমরা দেখলাম, এক দল, এক নেত্রী। অন্যরা কেও কথা বলতে পারে না, কথা বললেই জেল।
টুকু বলেন, আমার যে মামলা আদালত খালাস করে দিল, সেটা হাসিনার পছন্দ হলো না। তার আদালত আবার আমাকে সাজা দিল। এই জন্য আমি বলেছিলাম, হাসিনার এই রায় আমি মানি না। রায় মেনে আমি বাংলাদেশে যাব না, যদি যাই তাহলে আমার মরদেহ যাবে। এই যে তাদের সময়ে যে কয়েকটা নির্বাচন হয়েছে আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন কি-না। সব ডাকাতি করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। ব্যাংকগুলোও ডাকাতি করেছে।
টুকু আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও আমার এক ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আপনারা কি ভেবেছেন, এখনো পুলিশ আপনাদের সঙ্গে থাকবে? এগুলো করতে যেওনা, তা হলে সাধারণ জনগণের হাতে পড়লে চামড়া-মাংস আলাদা হয়ে যাবে। তোমাদের নেত্রী কোনোদিনও বাংলাদেশে আসতে পারবেন না, আসলে হত্যার অপরাধে তাকে ফাঁসিতে চড়তে হবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি জাহিদ আলমের পরিচালনায় ও শহর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু।
স্মরণসভা শেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শহীদ হওয়া সুমন, লতিফ ও রশিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে নিজস্বভাবে ১ লাখ করে টাকা দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জেলা যুবদলের সহসভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু, ছাত্রদলের সদস্য মো. সুমন ও যুবদলের কর্মী আব্দুল লতিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিহত রঞ্জুর স্ত্রী পৌরসভার মাছুমপুর মহল্লার মৌসুমী খাতুন, ছাত্রদলের কর্মী নিহত সুমনের বাবা শহরের গয়লা মহল্লার গঞ্জের আলী এবং একই মহল্লার নিহত যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফের বোন মোছা. সালেহা খাতুন বাদী হয়ে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন মিছিল শেষে মৃত্যুবরণ করেন আব্দুর রশিদ।
শুভ কুমার ঘোষ/এএমকে