লঞ্চে লেগে ছিঁড়ল তার, সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন বরগুনা শহর
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ‘রাজারহাট-বি’ নামক একটি চলন্ত লঞ্চে লেগে বরগুনায় ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে লঞ্চে থাকা যাত্রীরা নিরাপদে থাকলেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বরগুনা শহর। ঘটনার পরপরই নদীবন্দরে থাকা বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার খাকদোন নদীর ওপরে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সঞ্চলন লাইন ছিঁড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাকদোন নদীর ওপর থেকে অতিবাহিত ওজোপাডিকোর ওই সঞ্চালন লাইনটি বরগুনার বিদ্যুৎ সংযোগের মূল লাইন। দীর্ঘদিন দিন ধরেই এ লাইনটি উঁচুতে প্রতিস্থাপন করার জন্য বরগুনা নদীবন্দর বিদ্যুৎ সরবরাহের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগের মূল লাইনের নিচ থেকেই বরগুনা থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করত।
বরগুনার নৌবন্দর সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ‘রাজারহাট-বি’ নামের লঞ্চটি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে লঞ্চটি খাকদোন নদীতে বরগুনা ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে নদীর ওপর বিদ্যুৎ সংযোগের মূল লাইনের সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় লঞ্চের গতি কম থাকলে সংযোগ লাইনটি ছিঁড়ে যায়। তবে বৈদ্যুতিক সংযোগে অটো সার্কিট ব্রেকিং সিস্টেম চালু থাকায় লঞ্চের আটকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাইনটির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এতে লঞ্চে থাকা কোনো যাত্রীর হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল লাইনটি ছিঁড়ে যাওয়ায় বরগুনা শহরজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বিকেল ৪টার দিকে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।
রাজারহাট-বি লঞ্চের স্টাফ মো. সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে ঘাটে আসার সময় ঝুলে থাকা একটি বিদ্যুৎ লাইনে আটকে যায়। অটো সার্কিট থাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে যদি লাইনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকত তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত।
বরগুনা নদীবন্দরের দুলাল নামের এক স্টাফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে জেলা প্রশাসনের প্রতিটি সভায় এই লাইনটি উঁচু করতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও লাইনটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বরগুনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা খাকদোন নদীর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের একটি বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন ছিল। এ সংযোগ লাইনের নিচ থেকে লঞ্চটি যাওয়ার সময় লাইনে আটকে দুই পাড়ের খুঁটি ভেঙে তার ছিড়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে এখানে একটি আধুনিক সিস্টেম চালু থাকায় লঞ্চ আটকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ ঘটনায় বড় ধরনের হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বরগুনা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যে ঘটনাটি ঘটেছে এতে আমাদের ৩৩ ও ১১ হাজার ভোল্টের দুটি মূল লাইনের তার ছিঁড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিকেলে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। এ ছাড়া সবকিছু তদারকি করা হচ্ছে।
বরগুনা নৌবন্দর কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বেশি থাকায় লঞ্চটি বরগুনা ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে আটকে যায়। এ সময় লঞ্চের গতি কম থাকলেও লাইনটি ছিঁড়ে পড়ে যায়। তবে বরগুনা নদীবন্দরে আগে-পরে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাসহ একাধিকবার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দিলেও এ লাইনটি সরিয়ে নেয়নি। ফলে আজকে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা ঘটে। তবে বিদ্যুৎ লাইনটিতে যদি দুর্ঘটনার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকত তাহলে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারত। বরগুনার বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ লাইনটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
মো. আব্দুল আলীম/এমজেইউ