পুলিশে চাকরি দিতে ১০ লাখ টাকার চুক্তি, ৪ প্রতারক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ী জেলা পুলিশের কনস্টেবল পদে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার অপরাধে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত টাকা ও আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের বিলটাকাপোড়া গ্রামের ইউনুছ আলী বিশ্বাসের ছেলে মো. হামিদুল ইসলাম (৩১), ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলী মোল্লার ছেলে মোকলেছুর রহমান (৩৫), বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের খোর্দ্দমেগচামী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. আজিবুল শেখ (২০) ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার পূর্ব সদরদী গ্রামের মৃত আব্দুল হাই কাজীর ছেলে মো. নুরুল ইসলাম (৬১)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার সালখি গ্রামের মো. ওয়াজেদ ফকিরের ছেলে মো. জোবায়ের হোসেন (২০) রাজবাড়ী জেলা থেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। একই উপজেলায় বাড়ি হওয়ায় হামিদুল, মোকলেছুর, আজিবুল ও তাদের সহযোগী নুরুল ইসলাম জোবায়েরকে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
গত ২৬ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে তারা রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সের সামনে বটগাছের নিচে জোবায়েরের কাছ থেকে চাকরির জন্য কিছু খরচ লাগবে বলে ২ হাজার টাকা নেন। পরে বিষয়টি জোবায়ের তার বাবা ওয়াজেদ ফকিরকে জানান। বিষয়টি জানতে পেরে ওয়াজেদ ফকিরের সন্দেহ হলে তিনি উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডিবি পুলিশ রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সের সামনে অভিযান চালিয়ে হামিদুল ও মোকলেছুরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় হামিদুলের কাছ থেকে চাকরিবাবদ জোবায়েরের কাছ থেকে নেওয়া ২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের দুজনের দেওয়া তথ্যমতে ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের খোর্দ্দমেগচামী গ্রামে আজিবুলের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে জোবায়েরের এসএসসির সার্টিফিকেট ও পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রবেশপত্রের ফটোকপি জব্দ করা হয়।
পরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সের সামনে থেকে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। তারা পুলিশে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, রাজবাড়ীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৩১টি পদ শূন্য রয়েছে। এই ৩১টি পদের বিপরীতে আবেদন করেছে ২ হাজার ৩৩ জন। কনস্টেবল পদে চাকরি প্রার্থী বা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা যেন কোনোভাবে কারো প্রলোভনে না পড়েন। কোনো ধরনের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা যেন তারা না রাখেন। এ ব্যাপারে কারো যদি কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে এখন স্বচ্ছতার সঙ্গে দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আমরা নিয়োগ দিচ্ছি। নতুন করে যারা আমাদের পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পাবেন, তারা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করবেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে