গণঅভ্যুত্থান সফল করতে রাষ্ট্র সংস্কারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও গণবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের মানুষের অধিকার ফিরে এসেছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের যাতাকালে পিষ্ট জনগণ নতুন করে দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে ও জুলাই বিপ্লবের সফলতা টিকিয়ে রাখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের যে রোডম্যাপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই রোডম্যাপের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ একমত। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে ঝিনাইদহ ফ্যামিলি জোন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদ ঝিনাইদহ জেলা শাখা আয়োজিত স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাশেদ খান বলেন, আজকের এই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ন্যায্য অধিকার আদায়ে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। কিন্তু আপনারা দেখেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী ও আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনী দিয়ে শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল।
তিনি বলেন, জুলুম নির্যাতন করে কেউ চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হামলা দিয়ে মামলা করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। নুরুল হক নুরকে তারা আটক করে নির্মম নির্যাতন চালায়। নুরুল হক নুর আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের ৯০ ভাগ পতন হয়ে গিয়েছে, আপনারা আর ১০ ভাগ ধাক্কা দেন। আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি, নুরুল হক নুরের সেই বক্তব্যই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে স্মরণ রাখার তাগিদ দিয়ে রাশেদ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছি, আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকার সময়। আমরা শেখ হাসিনার অপশাসনের কঠিন পরিস্থিতিতে দলমত ভুলে রাজপথে থেকেছি। আগামীতেও আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশ ও জনগণের অধিকার রক্ষার স্বার্থে বিএনপি-জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদসহ সকল গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ঝিনাইদহবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের ছেলে, আপনাদের ভাই, আপনাদের সন্তান। আমি সব সময় আমার নিজ এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবি। আগামী দিনে এ জেলার স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা ও বেকারত্ব দূরীকরণে আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা রয়েছে। এত বড় একটি জেলার স্বাস্থ্যখাতে গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেনি। যে কারণে জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা হাসপাতালটির লিফট পর্যন্ত অচল হয়ে আছে। এ জেলার মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পায়নি।
রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। শাসক পরিবর্তন হয়েছে। বারবার দেশের মানুষ জীবন দিয়ে স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করেছে। আর কত রক্ত দেবে দেশের মানুষ? আমরা চাই, বারবার সুযোগ আসবে না, তাই এবার রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, এমন রাজনৈতিক দল চাই, যে দলের ওপর ভর করে দেশে যেন আর কখনোই কোনো শাসক স্বৈরাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠা না পায়।
গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নাসিম আনসারি, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম লিটন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম রায়হান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান টিপু, সাংবাদিক আজিজুর রহমান সালামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর