শ্যামনগরে প্রাচীন ঐতিহ্যের বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রীর প্রদর্শনী
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত নানা উপকরণ সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রদর্শনী ও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এসব উপকরণ লবণাক্ততা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আধুনিক পণ্যের চাপে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী গ্রামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সবুজ সংহতি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে ২০টি স্টলে বিলুপ্তপ্রায় এসব ঐতিহ্যবাহী পণ্য ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ ও টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রদর্শন করেন স্থানীয় জনগোষ্ঠী।
এসব উপকরণের মধ্যে ছিল লাঙল, জোয়াল, লাটি, ঠুষি, মই, পাখে, নিড়ানি, দা, কুড়াল, বটি, কাশি, হামান দিস্তা, শিল, নোড়া, পোলো, ঝুড়ি, বাজারা, খারা, হুঁকা, সাবল, ডোল, চাঙারি, মেঠে, কলস, পিতলের বিভিন্ন উপকরণ, হারিকেন, টেমি, ঝাতি, বিভিন্ন ধরনের জাল, পূজার সামগ্রী, কাস্তে, ছেমত, হাসো, দোড়া, পাটের বস্তা, চালন, কুলো, কলকে, বাটি, কাসার জিনিস, ঢেঁকি, দাঁড়িপাল্লা, বিচলি কাটার বটি, ঘণ্টা, তামার পয়সা, বাবুই পাখির বাসা, লাউয়ের খোল, পিঁড়ি, রেডিও, টর্চ লাইচ, মাটির ব্যাংক, রুটির তাবা, পিঁড়ি, ধামা, হরিণের শিংসহ হাজারো উপকরণ।
এ সময় সেখানে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা জানান, আগে জীবন-জীবিকা, জ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে এ সব উপকরণ ব্যবহৃত হতো। কালের পরিক্রমায় সেগুলো আজ রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। তবে এগুলোর ব্যবহার কমলেও তা সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
প্রদর্শনী পরবর্তী সংলাপে স্থানীয় কৃষক ভূধর চন্দ্র মণ্ডলের সভাপতিত্বে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ নিদর্শন টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মুন্সিগঞ্জ ইউপি সদস্য দেবাশিষ মণ্ডল, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাছুম বিল্লাহ, কৃষানি লতা রানী মণ্ডল, এসএসএসটির আহ্বায়ক প্রকাশ মণ্ডল, গৌতম সরদার, শিক্ষার্থী জবা মণ্ডল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, কালের বিবর্তনে উপকূলীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব বিলুপ্ত হচ্ছে। এসব দুর্বলতাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ নিদর্শন ধরে রাখতে হবে।
ইব্রাহিম খলিল/এফআরএস