‘শেখ হাসিনার’ নতুন ফোনালাপ, ‘ডিসেম্বর পার হতে দেওয়া যাবে না’
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর মাত্র একবারই তিনি বিবৃতি দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কণ্ঠ সদৃশ কয়েকটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনদের দাবি, ভারতে বসেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে। এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়েছে, তাদের বাড়ি ঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়?’ এর মাধ্যমে তার দলীয় কর্মীদের উত্তেজিত ও নির্দেশনা দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের আরেক প্রান্তে ছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল। ফোনালাপে বুলবুল শেখ হাসিনার কথার জবাবে বলেন, ‘জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।’ এতে আরও বুঝা যায়, দলীয় নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলছেন।
ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে তারা বেশি ভালো থাকবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখো, ওই শত্রুরা টেকে কি না? কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না। যে কয়টা নাফরমানি করছে তাদের একটাও থাকবে না।’
এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বলেন, ‘জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদম।’
তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগোন নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবেও ওই যে সুদখোর ইউনুসের গুটি গুটি চেহারা ধরা খেয়ে গেছে মানুষের কাছে।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়েতে মুখ খুলতে পারছে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের অভয় দিতে হবে। জবাবের প্রস্তুত নাও।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, আর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ছিলাম পরপর দুইবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। উনার বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালায় দিছে। আমারও বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালায় দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্য মামলা দিছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পোড়াই দিছে কে?’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ওরাই নেত্রী, জামায়াত-বিএনপি।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘর-বাড়ি নেই?’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘর-বাড়ি থাকবে না।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘একটা সংশয় নেত্রী, মাননীয় নেত্রী গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি, কিংবা তাদের বাড়ি-ঘরেও ওরা যায়নি। ওরা কীভাবে এটাকে..?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শোনো ওরা দেখে যেগুলি পটেনশিয়াল, যেগুলি দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সেজন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে, কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পুড়ে তাদেরও পুড়বে।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী, জি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেল নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর মামলা, আমার তো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি সবাই তালিকা করো। তোমরাও তালিকা করো। ২২৭ জনকে মার্ডারের লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায়ও সেই শাস্তি। তাই না? ঠিক আছে সেই শাস্তি নেব। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার একবার আসতে পারলে আর ডেভেলপ করব না, এবার করব সংস্কার। যার যা আছে তা নিয়ে তৈরি হও। এক মাঘে শীত যায় না। ডিসেম্বর পার হতে দেওয়া যাবে না।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী, আপনাকে দেশে আনার জন্য দরকার হলে জীবন দেব, পরিবারের সবার জীবন দেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বুলবুল জানান, শাকিল আলম বুলবুল এবং সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
রিপন আকন্দ/এমজেইউ