ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া কমানোর দাবিতে অর্ধদিবস হরতালের ডাক
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া কমানোর দাবিতে অর্ধদিবস হরতালসহ ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জ। শনিবার (২৬ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির কথা জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।
এই রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করারও দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
বর্তমানে এ রুটে বন্ধন, উৎসব, গ্রীন ঢাকা, আসিয়ানসহ কয়েকটি পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। এসব পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ৮০ টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫ টাকা।
রফিউর রাব্বি বলেন, যুগের পর যুগ ধরে সারাদেশে গণপরিবহন নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও অরাজকতা দূর হয় না। সরকার তাদের দলীয় লোকজনকে অনৈতিক সুবিধা দিতে এই সেক্টরে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যে সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সাধারণ যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এই অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ২২ অক্টোবর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান একাই গত ১৫ বছরে পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি করেছেন ২৪ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) তাদের এক গবেষণায় বলেছে, বিগত ১৪ বছরে শুধুমাত্র সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২৯ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তারা বলছে, ‘সড়ক ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির ব্যাপকতা ও গভীরতা অনেক বেশি। রাজনীতির কাছে এই খাতটি জিম্মি হয়ে আছে।’
‘শেখ হাসিনা সরকার পরিবহন মালিক ও মাফিয়াবন্ধব ছিল’ মন্তব্য করে রাব্বি বলেন, নিজেদের দলীয় ক্যাডার ও আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে সব সময় কিলোমিটার প্রতি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে অযৌক্তিকভাবে। সরকারের এ গণবিরোধী নীতির সঙ্গে মিল রেখে পরিবহন মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) জনগণের স্বার্থকে অবজ্ঞা করে বিভিন্ন স্থানের ভাড়া নির্ধারণ করে গেছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে পরিবহন নিয়ে অরাজকতা দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন সেক্টরের মতো এই পরিবহন খাতটি ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সব সময় তাদের সহায়তা করেছে। ২০১১ সালের জুন মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস ভাড়া ২২ টাকা থেকে ৩২ টাকা বৃদ্ধি করায় এখানে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সিন্ডিকেটের মাফিয়া ও গডফাদারদের কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন, কেউবা গা ঢাকা দিয়েছেন। দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতায় আমরা চাই এই পরিবহন সেক্টর যেন আবার অন্য কোনো চাঁদাবাজ-গডফাদারদের হাতে বন্দি হয়ে না পড়ে। জনগণের পকেট কেটে তাদের জিম্মি করে কোনো গডফাদার যেন আর ফুলে ফেঁপে উঠতে না পারে।
গত ২ এপ্রিল বিআরটিএ ঘোষিত দূরত্ব প্রতি ভাড়ার তালিকা ‘জনবিরোধী ও পরিবহন মালিকবান্ধব’ বলে মন্তব্য করে রাব্বি বলেন, বিআরটিএর হিসেবে এই রুটে ভাড়া দাঁড়ায় ৫৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবিকভাবে নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া কোনোভাবেই ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বিআরটিএর ত্রুটিপূর্ণ প্রজ্ঞাপনেই অনিয়ম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২ দশমিক ৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা। ফ্লাইওভার টোল ৫ টাকা ও সানারপাড় ইউটার্ন ৩ টাকা দেখিয়ে বলা হয়, এই রুটে মোট ভাড়া ৫৩ টাকা। কিন্তু একই শিটে বলা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভাড়া হবে ৫৪ টাকা। বাস্তবিক দেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভাড়ার থেকেও যে ২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিকারে প্রশাসন বা বিআরটিএর কোনে উদ্যোগ নেই।
বাসভাড়া কমানোর দাবিতে যাত্রী অধিকার ফোরাম আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দাবি মানা না হলে ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালেরও ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মো. নুরুদ্দিন, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, বাসদের সদস্যসচিব আবু নাঈম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরএআর