স্কুলের আসবাব বিক্রি: রাজবাড়ীর সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ব্যবহারযোগ্য আসবাবপত্র গোপনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘স্কুলের পুরাতন আসবাবপত্র বিক্রির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদের প্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সিদ্ধার্থ ভৌমিক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটিতে রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রতীশ চন্দ্র সেনকে আহ্বায়ক, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমানকে সদস্যসচিব ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌসকে সদস্য করা হয়।
গতকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে অবস্থান করে তদন্ত করেন তারা।
তদন্তকালে বিদ্যালয়ের ব্যবহারযোগ্য পুরাতন আসবাবপত্র গোপনে বিক্রির ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ মিলছে। কর্তৃপক্ষের লিখিত পূর্বানুমতি এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিলাম কমিটি গঠন ছাড়াই কীভাবে পুরাতন আসবাবপত্র বিক্রি করেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর বা দালিলিক প্রমাণাদি প্রধান শিক্ষক দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করার জন্য আমরা বিদ্যালয়ে সরেজমিনে এসেছি। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করব।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাজবাড়ী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রতীশ চন্দ্র সেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। আমরা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করব।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন কর্তৃক গোপনে বিক্রি করা মালামালের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক পিভিসি সিলিং ৪৫১ কেজি, হাউ প্লাস্টিক পিভিসি ১১৮ কেজি, প্লাস্টিক চেয়ার ২২৮ কেজি, কার্টন ৩৭০ কেজি, কাগজ ১৮৭ কেজি, ফ্যান ১৭টি, ফোম চেয়ার ১৮টি, লোহার রড ১৯৯ কেজি, অ্যাঙ্গেল ১৩১ কেজি ও টিন ৩৮৭ কেজি। আর এসব মালামালের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫০১ টাকা।
সূত্রটি জানায়, কাগজেকলমে প্রধান শিক্ষক উল্লিখিত দর দেখালেও বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য পুরাতন এসব মালামাল বিক্রি করেছেন আড়াই লক্ষাধিক টাকা। অনেক আইটেমের মালামাল পিস হিসেবে বিক্রি করা হলেও কেজি দরে বিক্রির মূল্য দেখানো হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক কর্তৃপক্ষের (স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের) বৈধ অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারযোগ্য পুরাতন মালামাল নিলাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই গোপনে উক্ত মালামাল বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। তার এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেছে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক।
বিক্রীত এসব মালামালের মধ্যে ৩০০টি ভালো প্লাস্টিকের চেয়ার রয়েছে। সেগুলোও বিক্রি দেখানো হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আর ১৮টি ফোমের চেয়ার বিক্রি মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা পিস করে। এ ছাড়া ১৭টি সিলিং ফ্যানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫০ টাকা পিস হিসেবে। অন্যান্য মালামালের মূল্যও কম দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া কিছু আইটেমের মালামাল তালিকা ছাড়াই বিক্রি করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজবাড়ী শহরের পৌর ইংলিশ সুপার মার্কেটের আন্ডার গ্রাউন্ডের দুইটি ভাঙারির দোকানে গিয়ে বিক্রি হওয়া এসব মালামাল দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির মধ্যে তড়িঘড়ি করে প্লাস্টিকের চেয়ার ও পিভিসি সিলিংগুলো বিদ্যালয় থেকে ভ্যানে করে ভাঙারির দোকানে আনা হয়।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমজেইউ