বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘বিনা লাভের দোকান’
বাজার সিন্ডিকেটের কালো হাত ভাঙতে খুলনায় ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগ নিয়েছে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে এই অস্থায়ী দোকান বসানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘বিনা লাভের দোকান’ মসুর ডাল ১ কেজি ৯৯ টাকা, ডিম ১ পিস ১২ টাকা দরে এক হালি ৪৮ টাকা, আলু ১ কেজি ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ১ কেজি ১০০ টাকা ও এক আটি লাল শাক ১২ টাকা ও প্রতিটি লাউ ৪০ টাকায় মিলছে। ক্রেতারা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ক্রয় করতে পারছেন।
সিন্ডিকেটের কালো হাত ভাঙতে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে আনতে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘বিনা লাভের দোকান’ বসানো হয়েছে। এখানে খুলনার সব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ভাঙতে আমাদের এই উদ্যোগ। যতক্ষণ তাদের সিন্ডিকেট থাকবে আমরা ততক্ষণ সিন্ডিকেট ভাঙতে কাজ করে যাবো। একদিনে এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। প্রতি সপ্তাহে আমরা এটি পরিচালনা করবো। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেট কীভাবে পরিচালিত হয়, সেটি বুঝতে কাজ করছি। এরপরই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক ও খুবি শিক্ষার্থী নাইম মল্লিক বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার হচ্ছে খাদ্য। এর আগে দেখেছি উন্নয়ন ছিল, কিন্তু মানুষের পেটে খাবার ছিল না। সাধারণ মানুষ খেয়ে পড়ে দিনটা ভালোভাবে কাটাতে পারে সে জন্য এই উদ্যোগ। প্রতি শুক্রবার এটি পরিচালনা করা হবে। মানুষের রেসপন্স এবং ভলান্টিয়ারের আগ্রহ অনুযায়ী এবং বাজার পরিস্থিতি যতক্ষণ স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ এই কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতেও যেন করা যায় এবং আরও কিছু পণ্য বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে।
শুধু একটি স্পটই নয়, খুলনা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘বিনা লাভের দোকান’ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক ও খুবি শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম তানভীর বলেন, গত ৫ আগস্টের পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দেখছি আমরা স্বৈরাচারের দোসরদের একটি গোষ্ঠী সিন্ডিকেটের ব্যানারগুলো পুরাতন নাম থেকে নতুন নামে দখল করছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারের সবজিসহ পণ্যগুলোর দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন হাতের নাগালের বাহিরেই চলে গেছে। আসলে বাজারের চিত্র এমন না। তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার জন্য আমরা ছাত্র-জনতা ‘বিনা লাভের দোকান’ দিয়েছি। এই দোকান আস্তে আস্তে ৩১ ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়বে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙে দেওয়া হবে।
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে একাধিক পয়েন্টে ‘বিনা লাভের দোকান’ বসানোর আহ্বান জানিয়েছেন ক্রেতারা।
‘বিনা লাভের দোকান’ পণ্য কিনতে আসা কানিজ ফাতেমা বলেন, এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। অধিকাংশ মানুষের কাছে বাজারদর যেটা সেটা আমার কাছেও অনেক বেশি মনে হয়। এই উদ্যোগটা যদি সব জায়গায় নেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হবে। এটা এখনো সব মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। সবাই যাতে এটি পাই সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আরও যদি বেশি পয়েন্ট করা যায় তাহলে আশা করি এটা সবার কাছে পৌঁছাবে। এটি করে বাজার সিন্ডিকেট উঠিয়ে দিলে ভালো হয়। আমি এখান থেকে আলু, পেঁয়াজ ও ডিম নিয়েছি। বাজারে এগুলো অনেক বেশি দাম।
মোহাম্মদ মিলন/এফআরএস