নওগাঁয় ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ ২ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা, আটক ৩
নওগাঁয় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আরমান হোসেনসহ (২২) দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের সামনে তাদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ৮টায় দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে সেনাবাহিনী।
আহত আরমান হোসেন ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। অ্যাডমিশনের প্রস্তুতিতে নওগাঁয় অবস্থান করছিলেন ছাত্রনেতা আরমান। আরেকজন মেহেদী হাসান (২২) নওগাঁ সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনন্দিন কর্মসূচি শেষে শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা। ওই মুহূর্তে হঠাৎ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরপর ছাত্রনেতা আরমান হোসেনকে অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ছাত্রনেতা আরমান। তাৎক্ষণিক তাকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা আরমানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। ওই মুহূর্তে মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরপর সেখান থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়ে কিশোর গ্যাং। এরপর আহত অবস্থায় আরমান ও মেহেদিকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নেন শিক্ষার্থীরা। দুজনের মধ্যে মেহেদিকে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আরমানকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহানে মোতায়েন যুক্ত বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার পতনের পর চাঁদাবাজিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমর্থন চেয়ে আসছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আকস্মিক এ হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
হামলার শিক্ষার ছাত্রনেতা আরমান হোসেন বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা (কিশোর গ্যাং) আমাকে মারপিট শুরু করে। আমার মাথাসহ পুরো শরীরে আঘাত করেছে। এক পর্যায়ে স্কুলের পেছনে অন্ধকার একটা জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এতে বাধা দিলে পকেট থেকে ছুরি বের করে আমাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরলেও অভিযুক্তদের গডফাদাররা প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকির ওপরে রেখেছে। বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা ফজলে রাব্বি বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা মাথায় রেখে হলেও প্রশাসনের উচিত সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়ানো। আজ অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ায় আমাদের সহযোদ্ধা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক ভূমিকা রাখলেও থানা পুলিশ অভিযুক্তদের নিয়ে থানায় বসে সেটেলমেন্টে ব্যস্ত। যে যতই চেষ্টা করুক, হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে না পারলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি, অপারেশন) আব্দুল আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে সান্নিধ্য, হাসান ও আলামিন নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আরমান হোসেন রুমন/এএমকে