পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেলেন মানিক
মানিক রহমানের জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
গতকাল (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে তার এই সাফল্যের কথা জানা যায়। অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর আগে ২০২২ সালেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এসএসসিতেও যেভাবে নিজের ল্যাপটপ পা দিয়ে চালিয়ে পরীক্ষার ফল বের করেছেন। ঠিক একইভাবে পা দিয়ে ল্যাপটপ চালিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা রেজাল্ট দেখেছেন মানিক নিজেই। এবারও পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর মানিকের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শুনে সবাই খুশি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। তিনি ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের মনোবলকে পুঁজি করে তিনি পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাতেও সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী। তাই মানিক রহমান ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম নবম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক যে শারিরীক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে যেন ভালো কোনো প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারে সেই দোয়াই করি।
মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছি। আমি যেন সবার দোয়া ও ভালোবাসায় প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে যেমন তার বাবা-মার কাছে হীরা মানিক। ঠিক আমাদের কাছেও সে অমূল্য। তার ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানের সবাই গর্বিত। দোয়া করি তার স্বপ্নগুলো যেন পূরণ হয়।
জুয়েল রানা/আরকে