আন্দোলনে হারিয়েছেন চোখের আলো, দেখতে চান নতুন বাংলাদেশ
সুনামগঞ্জের স্বপ্নবাজ তরুণ ফয়সাল আহমেদ। উন্নত জীবনের আশায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঠাকুরভোগ গ্রাম থেকে দশ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পর তার জীবন এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বিজয় মিছিলে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। সংঘর্ষের সময় ছোড়া একটা ধারালো পাথরের আঘাতে কেটে যায় তার একটি চোখ। এরপর পথচারীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর ঢাকায় দুটি অপারেশন করানোর পরেও ফেরেনি তার চোখের আলো। দুই চোখেই তিনি এখন আর দেখতে পান না।
গত কয়েক বছর যাবৎ ফয়সাল উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে বসবাস করছেন। ডেলিভারি ম্যানের কাজ করে স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে সামান্য আয়ে দিন চলত তার। ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ নাগরিকের অধিকার ও ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিলেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার পতনের পর সবাই যখন বিজয় মিছিল করছে তখন আমিও সেই মিছিলে যোগ দেই। সেখান থেকে ফেরার পথে সংঘর্ষে ইট-পাটকেলের আঘাতে আমার একটি চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমার। হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, চোখের অপারেশন করতে বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাইনি আমি। কর্মজীবনে সংকট ও সহায়তার অভাব নিয়েই দিনযাপন করছি। এদিকে যে ডেলিভারি কোম্পানিতে কাজ করতাম, তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে মিছিলে আহত হওয়ার দায় তারা নেবে না। কারণ দুর্ঘটনাটি কাজের সময় বা দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ঘটেনি। ফলে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পাব না। এখন আমি সম্পূর্ণ অসহায়। চোখ হারিয়ে কর্মক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি, আর নতুন কোনো উপার্জনের পথও খুঁজে পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ গ্রামে ফিরে আসতে হয়েছে।
ফয়সাল এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তার দাবি জানান। তিনি চান, সরকার তার অবস্থার দিকে নজর দিক এবং চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, যেখানে নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু আজ সেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে গিয়ে নিজেই উপেক্ষিত।
ছাত্র আন্দোলনে আহতদের জন্য দেওয়া যে হেল্পলাইন নাম্বার চালু হয়েছে সেখানে যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি।
ফয়সালের চিকিৎসা বিষয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, ওনার বিষয়ে আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এখন যেহেতু জানলাম ওনার চিকিৎসার ব্যপারে অবশ্যই সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে। তার বিস্তারিত তথ্য দিলে আমার জায়গা থেকে যা করার দরকার সবই করব।
তামিম রায়হান/আরকে