ময়মনসিংহে টানা বৃষ্টিতে নতুন করে আরও ২৫ গ্রাম প্লাবিত
টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলায় নতুন করে আরও ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়াও বিগত পাঁচ দিন ধরে জেলার এই তিন উপজেলার প্রায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে দুর্গত অবস্থায় রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অন্তত ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে উপজেলায় নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বৃষ্টি না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী শিশুসহ কয়েক শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে কংস নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে মঙ্গলবার সকালে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, কংস নদীর পাড়ে আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরের চারপাশে পানি। পোলাপান নিয়ে পানির মধ্যে খুব কষ্টে আছি। গতকাল শুধু একটি সংগঠন আমাদের বিরিয়ানি দিয়েছে, প্রশাসন থেকে কেউ কোনো খোঁজ-খবর এখনও নেয়নি।
সাহাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে পানি বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। নদীর পাশে আমাদের বসবাস। তাই সবসময় আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে। কখন জানি পানি বেড়ে ঘর ডুবে যায়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিনতি রানী পাল বলেন, বন্যায় পূজার আনন্দ ম্লান হয়েছে। দুবেলা খাবারই কপালে জুটছে না। তাহলে পূজা কীভাবে করব। সরকার সহযোগিতা করলে অন্তত সন্তান-সন্ততি নিয়ে চলতে পারতাম।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, পঞ্চম দিনে সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বেড়েছে, সেইসঙ্গে নতুন কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা বানভাসি মানুষকে শুকনো খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ করছি। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নতুন করে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নসহ চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে আক্রান্ত ১৬টি গ্রাম। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দিনের অবস্থা ভালো থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে পানি নেমে যেতে পারে।
এ ছাড়াও হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে হালুয়াঘাটে বন্যার সৃষ্টি হয়। উজানের পানি কমে এখন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এই ১৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাময়িকভাবে তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ক্ষতি নিরূপণ করে সামগ্রিক সহযোগিতা করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে।
মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এএমকে