গুলিবিদ্ধ সেই দিনমজুর পেলেন ৫০ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন দিনমজুর আব্দুর রশিদ। দিনমজুর হওয়ায় সাধ্য ছিল না চিকিৎসার। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় বেঁচে ফিরলেও থমকে যায় চিকিৎসা। এরপর স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে স্ত্রী বিক্রি করে দিয়েছিলেন নবজাতক সন্তানকে।
পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সন্তান ফিরে পেলেও অর্থের অভাবে থুবড়ে পড়ে চিকিৎসা রশিদের চিকিৎসা। খবরটি জানার পর সেই রশিদকে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যারিটি সংগঠন ‘লাভ শেয়ার বিডি ইউএস’।
সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলার তেঁতুলিয়ার উপজেলা পরিষদে হলরুমে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার আয়োজনে লাভ শেয়ার বিডি ইউএস’র সংগঠনটির প্রদত্ত গুলিবিদ্ধ রশিদের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি। ভবিষ্যতে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করার আশ্বাস প্রদান করেছেন এই ইউএনও।
জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সমন্বয়ক ফেরদৌস আলম লিটনের সভাপতিত্বে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তেঁতুলিয়ার সমন্বয়ক হযরত আলী, ওবায়দুল হক, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি খন্দকার আবু সালেহ ইব্রাহিম ইমরান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবু বক্কর ছিদ্দিক সবুজ, জাগ্রত তেঁতুলিয়া সংগঠনের সদস্য তহিদুল হক, মোবারক হোসেন, মাসুদ রানা ও আহসান হাবীবসহ আরও অনেকে।
জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব, জাতিসংঘ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফিংকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খ্যাতিমান সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। তার সঙ্গে থাকা চ্যারিটি সংগঠন ‘লাভ শেয়ার বিডি ইউএস’র পরিচালক যথাক্রমে ফজলে ভূঁইয়া নওশাদ, জাহিদ খান, জাকির চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম। ওই সময় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ৬৫ জন রোগীকে আর্থিক সহায়তা দিতে যান সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী ও সংগঠনটির পরিচালক। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও ওই আন্দোলনে নিহত ৫ সাংবাদিক পরিবারকে আলাদাভাবে ৫ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেন তারা।
আরও পড়ুন
অর্থ সহায়তা পেয়ে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ বলেন, টাকাটা পেয়ে খুবই উপকৃত হলাম। এ অর্থ দিয়ে আমার চিকিৎসা করাতে পারব। আমার শরীরে এখনো চারটা গুলি রয়েছে। সেদিন ৪ আগস্ট দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতালের গেটে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হই। সেখান থেকে কয়েকজনের সহায়তায় চিকিৎসা করা হলে কোনভাবে প্রাণে বেঁচে যাই। একদিকে টাকার সংকট, আরেকদিকে স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের সময়ে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি বাড়তে থাকে। ৮ আগস্ট দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে তার পরের দিন শুক্রবার একটি অপারেশন করা হয়। এরপর দিনই স্ত্রী রোকেয়া বেগম কন্যা সন্তান জন্ম দেন। আমার চিকিৎসার জন্য সে নবজাতকও ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আমার স্ত্রী। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় সন্তানকে ফিরে পেয়েছি।
রশিদ আরও জানান, ইউএনও স্যারের সহযোগিতায় আজকে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে খুবই উপকৃত হয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি ‘লাভ শেয়ার বিডি ইউএসকে’। এভাবে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য। অপারেশনের পর গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ এখনও শঙ্কামুক্ত নন। শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন। আশা করি ভবিষ্যতে এলাকার অসহায় মানুষের সেবায় এই সংগঠন আরও ভূমিকা রাখবে। একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসার জন্য সমাজের সামর্থবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এসকে দোয়েল/আরকে