বিসর্জন দেওয়া হয় না যে দুর্গা প্রতিমাকে
দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। তবে রাজশাহীর তাহেরপুরে এক মন্দিরে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন ছাড়াই পালিত হয় দুর্গোৎসব।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে অবস্থিত এক মন্দিরে এক টন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি ব্রোঞ্জের প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় না। এ মন্দিরে ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি এই প্রতিমাকে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজা কংসনারায়ণ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- গোবিন্দ মন্দির, শিবমন্দির, দুর্গামাতা মন্দির ও কালীমন্দির।
বর্তমানে মন্দিরগুলো তাহেরপুর পৌরসভায় অবস্থিত। এই মন্দিরে প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন রাজা কংসনারায়ণ। মন্দিরটিতে পূজার আদি স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে এখানে এক টন ওজনের অষ্টধাতুর ব্রোঞ্জের প্রতিমা তৈরি করে ২০১৮ সালে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়।
মন্দিরের পুরোহিত শ্রী গোপাল বলেন, মণ্ডপটিতে অষ্টধাতুর তৈরি ব্রোঞ্জের প্রতিমা রয়েছে। সেগুলো মণ্ডপে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। তাই এই প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয় না।
সনাতন ধর্মলম্বীরা বলেন, পৃথিবীতে দেবীর প্রথম আবির্ভাবস্থল রাজশাহীর তাহেরপুর। যে সময় রাবণের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দশরথপুত্র রামচন্দ্র দুর্গার অকালবোধনে পূজা করেন। সেই পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে রাবণবধের বর প্রদান করে দুর্গা। সেই বর পেয়ে রাম লঙ্কারাজ রাবণকে বধ করতে সক্ষম হন। ৮৮৭ বঙ্গাব্দে (১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে) কংসনারায়ণের আহ্বানে পুরোহিত রাজপণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী পূজার সব ব্যবস্থা করেন। এটি ছিল শরৎকালে, আশ্বিন মাসের মহাষষ্ঠী তিথি। এই তিথিতে দেবীর বোধন হয়। দুর্গার প্রথম পদধূলিতে ধন্য এই পূণ্যভূমি। এই পূণ্যভূমি থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা।
এ থেকে দুর্গাপূজা সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এই উৎসবকালের পরিক্রমায় আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণভাবে এখন পালিত হয়। রাজা কংসনারায়ণের তৈরি সেই চার মন্দিরে এখনো পূজা অর্চনা চলছে। যা দুর্গাপূজার আদি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আসছে।
জানা গেছে, আগামী ৮ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে মা দুর্গার আগমন ঘটবে। শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১২ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জন ও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাৎসব।
শ্রী শ্রী গোবিন্দ ও দুর্গামাতা মন্দির ও পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু রায় বলেন, পূজার প্রস্তুতি আগের চেয়ে একটু কম। এ বছর সেভাবে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেলও করা হচ্ছে না। কারণ পূজা উদযাপন কমিটির সর্বশেষ সভায় আমাদের অনেক সদস্য আসতে পারেননি এবং পুরোনো দাতারা সেভাবে সহায়তাও করতে পারেননি। সব মিলেয়ে ভালোই প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবল আলম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে রাজার বংশধরেরা ভারতে চলে গেলে রাজবাড়িসহ সব জমি লিজ নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ। ২০১৩ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্দিরটি খুলে দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে মন্দিরে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অষ্টধাতুর প্রতিমা দেন স্থানীয় সাবেক সাংসদ এনামুল হক।
আরকে