খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে।
মামলার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তৌফিকুল আলম।
মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- নিমন্ত ত্রিপুরা (অয়ন ২২), টুনশু চাকমা, সজিব চাকমা (১৯), প্রণয় চাকমা (১৯), কোষ চাকমা (২১), টিনটু চাকমা (১৯), অম্লান ত্রিপুরা (২০), আইকন চাকমা (২০), নিউটন মারমা লিটন (২০) ও অনিল চাকমা (১৯)। এদের মধ্যে সজিব, প্রণয় ও কোষ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষের রুমে শিক্ষক সোহেল রানাকে মারধর করে বাথরুমে আটকে রাখার খবরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় ৪০০/৫০০ উশৃঙ্খল জনতা ও শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে শিক্ষক সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষের টয়লেটে গণপিটুনি দিয়ে ফেলে রাখে। তাকে উদ্ধার করতে গেলে ৪০০-৫০০ উশৃঙ্খল জনতা ও শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ পুলিশের ৫ জন আহত হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। নাম প্রকাশ না করলেও প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক ছাত্রদের উসকানি ও ইন্ধন জুগিয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌফিকুল আলম বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মামুন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং দীঘিনালা থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ ৬টি মামলা হয়েছে। সব কটি মামলায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিদের শনাক্ত করে আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার জেরে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে মহাজনপাড়া, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধাওয়-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অনেকে আহত হন। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের নিউজিল্যান্ড এলাকায় মামুন নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় দীঘিনালার লারমা স্কয়ারের দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলায় ছড়িয়ে পরে সহিংসতা। এ ঘটনায় দুই জেলায় চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়।
মোহাম্মদ শাহজাহান/আরএআর