‘দীর্ঘদিন একটি অনৈক্য শাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম’
রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি অনৈক্য শাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম। এই প্রক্রিয়া থেকে বের হতে গিয়ে প্রায় ১৫০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে এবং আহত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং মানবিক রাষ্ট্র গঠনের যে লড়াই তা দীর্ঘ ১৫ বছরের। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা লড়াই করে জিতেছি গত ৫ আগস্ট। একটি পরিবর্তিত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে এবার আমরা শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করবো।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জ থানা ক্যাম্পাসে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এসপি শরীফ উদ্দিন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি শারদীয় পূজায় মুসলমান সম্প্রদায়ের বিপুল উপস্থিতির কারণে আরও জাকজমকপূর্ণ হয়ে উঠে। আমরা এবার বিশ্বাস করতে চাই যে, এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা হবে অধিকতর আনন্দময়, জৌলসময় এবং অধিকতর নিরাপত্বাপূর্ণ এবং নিরাপদের। যে বা যারাই বিশৃঙ্খলা তৈরির বিন্দুমাত্র চেষ্টা অথবা করার চিন্তা করবে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, এই রাষ্ট্রের যারা শত্রু। যারা গণতন্ত্র এবং মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের শত্রু তারা যেকোনো জায়গায় ওৎ পেতে থেকে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেকের দুইটা চোখ আছে এই চোখ যেন সিসিটিভি ক্যামেরা হিসেবে কাজ করে। কারণ এই রাষ্ট্রের যে সম্প্রীতি, যে সার্বভৌমত্ব সেটা আমরা রক্ষা করতে সবাই দায়িত্ব পালন করবো।
আরও পড়ুন
দেশের ১৮ কোটি মানুষ একটা অবিভাজ্য সত্তা ও সকলে মিলে একজাতি উল্লেখ করে এসপি শরীফ উদ্দিন আরও বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে ধারণা আমাদের দিয়েছেন। এই ধারণাপত্রের আলোকে বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের যত ধরনের জাতিগোষ্ঠী আছি, আমরা সবাই বাংলাদেশি। কাজেই পাহাড়ি, বাঙালি বলে বিভেদ তৈরির যেমন কোনো সুযোগ নাই। ঠিক আমাদের সংবিধানের যে স্পিরিট সেই স্পেরিটের আলোকে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বলে কোনো ধরনের বিভেদ তৈরি করার কোনো সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে সমাজ ব্যবস্থা সেটা হলো ধর্মীয় মূল্যবোধের একটা সমাজ ব্যবস্থা। বাংলাদেশে মুসলমানরা ৯২ শতাংশ। আমাদের মুসলমানরা অত্যন্ত সম্মান এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের যে হিন্দু ভাই-বোনেরা আছে তাদের সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রেখে আসছেন। আমাদের নাগরিকদের মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। দীর্ঘজীবন ধরে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে বিরাজমান। তা রক্ষা করেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
মতবিনিময় সভায় বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট উপজেলা সভাপতি উত্তম কুমার সাহা, ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী সরকার প্রমুখ।
এ বছর রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলার ৮৩৫টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে যাবতীয় নিরাপত্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মণ্ডপ কমিটিসহ প্রশাসন। প্রত্যেকটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এবার দুর্গোৎসবে র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি থাকবে সেনাবাহিনীর টহল টিমের নজরদারি। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মণ্ডপের নিরাপত্তা জোরদারে থাকবে বাড়তি ব্যবস্থা।
বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দেবী দুর্গার আগমনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, হাঁস, প্যাঁচা, সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতিমা রং করার কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে কমিটি গঠনের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদের তথ্যমতে, বুধবার (২ অক্টোবর) ভোর থেকে দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার ছয় দিন পর শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। সেই হিসেবে ৯ অক্টোবর দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়াদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে