দেড় কি.মি. সড়কে ৬ স্পিড ব্রেকার, ঘটছে দুর্ঘটনা
মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও ইসলামপুর এলাকার সড়কের দেড় কিলোমিটার স্থানে ছয়টি উঁচু স্পিড ব্রেকার তৈরি করে রমরমা কৃষিজমি ভরাট বাণিজ্য চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মোবাইল কোর্ট না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ভূমিদস্যুরা। যত্রতত্র ড্রেজার পাইপ স্থাপন করে কৃষিজমি ভরাট করছেন তারা।
এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ প্রশাসন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করলেও তা অমান্য করে জেলার লৌহজং-টঙ্গিবাড়ি উপজেলার ডহরি-তালতলা খাল দিয়ে বালুবাহী বাল্কহেড ভরে বালু আনা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লৌহজং উপজেলার ডহুরি গ্রাম হতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কুন্ডের বাজার পর্যন্ত খালের দু-পাশে চলছে কমপক্ষে ২০-২৫টি আনলোড ড্রেজার। এগুলোর অধিকাংশই রাস্তার ওপর দিয়ে স্পিড ব্রেকার তৈরি করে, কোথাও রাস্তা কেটে পাইপ স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকার বালু কাটার মূল হোতা বিএনপির নেতা আলি। সরকার পরিবর্তনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে চলছে একাধিক কাটার ড্রেজার। এ ছাড়া বালিগাঁও গ্রামের জুলহাস শেখ, সুজন মুন্সী, অহিদ হাওলাদার, ডিশ সুজন, আনিস মুন্সী ও বালিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হাজি দুলালের নেতৃত্বে চলছে ড্রেজার। বালিগাঁও-কলমা সংযোগ সড়কের ইসলামপুর গ্রামে চারটি, চাষি বালিগাঁও গ্রামে একটি ও বৌবাজার এলাকায় একটি ড্রেজারের পাইপ লাইন রাস্তার ওপর দিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অটোচালক সবুজ বলেন, স্পিড ব্রেকারগুলোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই উল্টে যাচ্ছে অটো। মানুষ আহত হচ্ছেন। এ ছাড়া এগুলোর কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় বেশি লাগছে। প্রচণ্ড ঝাঁকুনির কারণে গাড়ির পার্টস ও বডির ক্ষতি হচ্ছে। চার্জও সেভাবে থাকছে না।
এদিকে, বালিগাঁও ও তার আশপাশের এলাকার খালে বাল্কহেড রেখে কাটার ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটছেন ইমরান বাছার, সুমন মোল্লা, টিটু, আনোয়ার, মামুন, সুজন সিকদার, সুমন হাওলাদার ও রাজিব। উপজেলার সুবচনী এলাকায় ড্রেজার দিয়ে কৃষিজমি ভরাট করছেন মকবুল, ইকবাল, ফারুক ব্যাপারী, সাব্বির, মিলন, মুছা, বাবু ও শরিফ হালদার। তারা বাল্কহেড থেকে বালু টেনে পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকার কৃষিজমিসহ সরকারি খাসজমি খাল, জলাশয় ও পুকুর ভরাট করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার দিয়ে ভরাটের কারণে বর্তমানে চাষাবাদের জমি কমছে। হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য খাত। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।
আরও পড়ুন
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে ড্রেজার বাণিজ্য বেড়েছে। আগে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের লোকজন এ ব্যবসা করতেন। এখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিলে এগুলো করছেন।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ডহরি-তালতলা খালের লৌহজং উপজেলার বাসুদিয়ায় একটি, খেতেরপাড়া গাংচিল মাঠের পাশে একটি, বনসেমন্তে একটি, ডহরি-নওপাড়া গ্রামের স্টেশন অফিসের পাশে দুটি, সুবচনী এলাকায় পাঁচটি ও তালতলা এলাকায় একাধিক কাটার ড্রেজার চলছে। খালের মধ্যে বসানো হয়েছে আনলোড ড্রেজার। পদ্মা নদী হয়ে তালতলা ডহুরি খাল হয়ে আসছে বালু। বাল্কহেড দিয়ে বালু এনে তা আনলোড ড্রেজারের মাধ্যমে পাম্প করে এলাকার বিভিন্ন কৃষিজমিতে পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলা যায় না। রাতদিন ড্রেজার মেশিনের শব্দে বাড়িতে ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। খালে একাধিক বাল্কহেড চলাচলের কারণে খালের পাশের বাড়িগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
এ বিষয় লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কায়েসুর রহমান জানান, গত সোমবার কলমা ও গাওদিয়া এলাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধভাবে ড্রেজার ব্যবসার দায়ে চার ড্রেজারমালিককে নগদ তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডহরি-তালতলা খালে যারা এগুলো করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু বলেন, মঙ্গলবার উপজেলার কামাড়খাড়া এলাকার রাস্তার ওপর থেকে একটি পাইপ অপসারণ করা হয়েছে। এ সময় অপর এক ড্রেজারমালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ইসলামপুর এলাকায় মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসাইন বলেন, খোঁজ নিয়ে ড্রেজারের পাইপ অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব.ম শামীম/পিএইচ