৩৬ ঘণ্টা ধরে ফরিদপুর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
থ্রি হুইলার ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় ফরিদপুর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা।
মহাসড়কে অবৈধভাবে থ্রি হুইলার চলাচল ও যাত্রী তোলা নিয়ে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুরের নগরকান্দায় মিনিবাসের চালকদের সঙ্গে থ্রি হুইলারের শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে সেটি উভয়পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা ঘটনা ঘটলে বাস শ্রমিকরা ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ করে বাস চলাচল বন্ধ রাখে। রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের সমঝোতা না হওয়ায় মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকেও অভ্যন্তরীণ কোনো রুটেই বাস চলাচল করেনি। এদিন দুপুর থেকে মুন্সিবাজার এলাকায় মহেন্দ্র শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে ফরিদপুর থেকে দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ বুধবারও আন্তজেলা সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে যাত্রী তোলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে ফরিদপুরের তালমার মোড় এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নাজমুলকে (২৫) মারপিট করে বাস শ্রমিকরা। আহত নাজমুল নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় মহেন্দ্র শ্রমিকদের হামলায় তালমার মোড় এলাকায় তিনটি বাসের কাচ ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী। পরে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস শ্রমিকরা অতর্কিতভাবে হামলা চালালে ফরিদপুর জেলা সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মো. রিপন (৪৫) আহত হয়। এছাড়া ৩/৪ টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আহত সিএনজি চালককে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাস শ্রমিকরা আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিবহন মালিকরাও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখেন।
দেখা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর শহরতলীর ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের মুন্সিবাজার চৌরাস্তা এলাকায় সিএনজি চালকদের হয়রানি ও মারধরের প্রতিবাদে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও মালিক সমিতির উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতি কর্তৃক তারা হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এদিকে বাস কাউন্টার থেকে ঢাকা ছাড়া স্থানীয় লোকাল বাস ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল করেনি।
ফরিদপুর থেকে ঝিনাইদহ যাবেন কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন (৩৪)। ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, বাস হলে দ্রুত যেতে পারতেন। যদিও বাস ভাড়াতেই তিনি সিএনজিতে চড়ে ঝিনাইদহ যাবেন, এতে খরচ না বাড়লেও সময় বেশি লাগবে। এটি তার জন্য ভোগান্তি। শুধু সাজ্জাদই নয় কুষ্টিয়া, মাগুরার এমন অনেক যাত্রীই দ্রুত পৌঁছানোর বিষয় নিয়ে সন্ধিহান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র চালানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য সিএনজি চালকরা এর আগেও পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও বাস শ্রমিকদের কারণে বিষয়টি সমাধান হয়নি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক সমিতির নেতা মতিউর শেখ বলেন, ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির অত্যাচারে জিম্মি দশায় রয়েছে সিএনজি চালকরা। ফরিদপুর গেলে তারা আমাদের চালকদের মারপিট করে। এছাড়া বাস মালিক সমিতির কারণে আমাদের সিএনজি-মাহেন্দ্র সহ ছোট গাড়িগুলোর রোড পারমিট পাচ্ছি না। রোড পারমিটসহ বাস মালিক সমিতির জিম্মি দশা ও অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।
ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, মহাসড়কে মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি। মহাসড়কে তিন চাকার যন্ত্রযান চলতে পারবে না এ বিষয়ে হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়নি। এখন এ পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে আমারা যাত্রী পাচ্ছি না। এর জন্য বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা।
তিনি বলেন, ঢাকার যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে শুধুমাত্র ফরিদপুর-ঢাকা রুটে বাস চলাচল করছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা পথে সব বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
ফরিদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। অতিশ্রীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
জহির হোসেন/আরকে