ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা নজরুলকে হত্যা করা হয়েছে, দাবি পরিবারের
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মো. নজরুল ইসলাম ঢালী (৫৮) নামে এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। পরে রাত ৮টায় তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নজরুল খাদেরগাঁও ইউনিয়নের বেলুতি ঢালী বাড়ির মৃত রুস্তম ঢালীর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি ঠিকাদারি করতেন। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে কচুয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়েন।
পুলিশ জানায়, বেলুতি প্রধানীয়া বাড়ির মৃত আবুল হাশেম ক্বারীর ছেলে মো. মফিজুল ইসলামের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নজরুলের মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহের পাশে নজরুলের ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন, একটি বাটন মোবাইল, চশমা, জুতা ও গ্যাস লাইট পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকালে পথচারীরা নজরুলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখে ডাক-চিৎকার দিলে তার পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ।
পরিবারের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে।
নজরুলের ছেলে জামিউল অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে মরদেহ ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। যে চিকন রশি দিয়ে মরদেহের গলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তা দিয়ে আত্মহত্যা সম্ভব নয়। এছাড়া, মরদেহের পা মাটিতে লাগানো ছিল। আমরা মতলব থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।
নিহত নজরুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় তার স্বামী বুকের ব্যথা নিয়ে নারায়ণপুর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। সেখান থেকে দুপুরে বাড়ি ফেরেন। এরপর সন্ধ্যার আগে প্রতিদিনের মতো বাড়ির কাছে দোকানে যাবেন বলে বের হন নজরুল। এ দিন রাত ১০টা পর্যন্ত নজরুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল তার। তিনি তার স্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন, বাড়ির কাছেই আছেন, তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। পরে রাত সাড়ে ১০টায় তাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি আর রিসিভ করেননি।
রাতে পরিবারের কেউ নজরুলের খোঁজে বের হননি? এ প্রশ্নের জবাবে জেসমিন আক্তার জানান, প্রায় দিনই রাত ১টা-২টার দিকে বাড়ি ফিরতেন নজরুল। এ কারণে খোঁজ করার প্রয়োজন মনে করেননি তারা।
পিবিআই চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন বলেন, নজরুলের পায়ের ওপরের অংশে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ রয়েছে। আর কোনো অংশে আঘাতের চিহ্ন নেই। এ বিষয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছায়া তদন্ত চলছে।
মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহম্মেদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে থেকে আইনি কার্যক্রম শেষে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। পিবিআইসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
আনোয়ারুল হক/কেএ