নদী রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে বরগুনায় ব্যতিক্রমী আয়োজন
বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী রক্ষায় বর্তমান প্রজন্মকে সচেতন করতে বরগুনায় আয়োজন করা হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান, নদীর গল্প শুনি। এতে বরগুনার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশন ও জলতরণীর সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিয়া।
ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনের প্রধান চমক রাখা হয় গ্রাম বাংলার মানুষের ব্যবহৃত জাল দড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা মঞ্চ। এছাড়াও উপস্থিত তরুণ প্রজন্মকে নদী দূষণসহ যেসব কারণে নদী ধ্বংস হচ্ছে তার বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে রাখা হয় স্থির চিত্র গ্যালারি। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা নদীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। এছাড়া যেসব কারণে আমাদের দেশের বিভিন্ন নদী হারিয়ে যাচ্ছে সেসব বিষয়ে সকলকে সচেতন করেন।
জলতরণীর প্রতিষ্ঠাতা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, তালতলী ও আমতলী উপজেলার সমন্বয়ক আরিফ রহমান বলেন, প্রতিদিন বিভিন্নভাবে আমাদের নদী দূষিত হচ্ছে। আর এ কারণেই আমাদের নদীগুলোর নাব্য কমে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নদীর প্রয়োজনীয়তা জানাতে এবং নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ওয়াটারকিপার্স বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক ও পরিবেশ কর্মী মুশফিক আরিফ বলেন, প্রত্যেকটি শহরই গড়ে ওঠে একটি নদীকে কেন্দ্র করে। ঠিক তেমনি বরগুনা শহরও গড়ে উঠেছে খাকদোন নদীকে কেন্দ্র করে। বরগুনার এ খাকদোন নদীটি এক দিক থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে, দখলের মুখে পড়েছে, নদীর নাব্য কমেছে। একজন পরিবেশ কর্মী হিসেবে আমি মনে করি তরুণ প্রজন্মকে নদীর প্রয়োজনীয়তা জানাতে স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশন যে আয়োজন করেছে, এমন আয়োজন বারবার করা প্রয়োজন।
ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানের আয়োজক স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি হাদিউর রহমান ধ্রুব বলেন, আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের যেসব হারিয়ে যাওয়া নদী রয়েছে এবং আরও যেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে সে নদীগুলোর যে প্রবহমান স্মৃতি তা আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিয়া বলেন, আমাদের অনেক নদী হারিয়ে গিয়েছে যেগুলো আমাদের প্রাণ প্রকৃতির উৎস ছিল। একসময় আমাদের যাতায়াতের জন্য প্রধান মাধ্যম ছিল নদী। দখল দূষণের কবলে পড়ে এককথায় আমাদের অত্যাচারের কারণে নদীগুলো হারিয়ে গেছে। এছাড়াও আমরা নদীগুলোকে শাসন করেছি, নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ ধ্বংস করেছি। ফলে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আজকের এ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে নদী হারিয়ে যাওয়া কারণ এবং কেন আমাদের নাদী প্রয়োজন এসব বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বপ্ন পূরণ যুব ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মোতালেব মিয়া, বরগুনা নদী বন্দরের বন্দর কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, প্রকৃতি ও জীবন সংগঠনের সমন্বয়ক হাসান ঝন্টু, সাংস্কৃতিক কর্মী চিত্তরঞ্জন শীল, সচেতন নাগরিক কমিটি বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মনির হোসেন কামাল, ওয়াটার্স কিপার বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক মুশফিক আরিফ ও জলতরণী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফ রহমান।
মো. আব্দুল আলীম/এসকেডি