দাফনের ৫৫ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো বাবলু ফারাজীর মরদেহ
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী বাবলু ফারাজীর মরদেহ দাফনের ৫৫ দিন পর উত্তোলন করা হয়েছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উত্তোলনের সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআই কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে শহরের থানার মোড় এলাকায় বাবলু ফারাজীকে (৫৮) গুলি করে ও এলোপাথাড়ি মারধর করে হত্যা করা হয়। বাবলু ফারাজী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করে গামছা, বিছানার চাদর ও লুঙ্গি বিক্রি করতেন। বাবলু ফারাজী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় গত ১৯ আগস্ট নিহত বাবলু ফারাজীর ছেলে সুজন মাহমুদ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জাহিদ হোসেন জাফর, শামছুজ্জামান অরুন, বাবুল আক্তার, মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শ্রী দিপেন্দ্র নাথ সিংহ, এসআই আসাদুজ্জামান আসাদ, সাহেব আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, এএসআই উজ্জ্বল হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক স্বপন, অজয় কুমার সুরেখা, বিশ্বনাথ সাহা বিশু, রমেশ ঠাকুর, মতিউর রহমান মজনু, আনিছুর রহমান আনিছ, পারভেজ আনোয়ার তনু, আলী জিন্নাহ, কামাল ঠাকুর, অমূল্য, আরশাদ আলী।
এজাহারে উল্লিখিত অন্য আসামিরা হলেন- হাজী এনামুল হক, মানব চাকী, ওমর ফারুক, শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, ইয়াসির আরাফাত তুষার, হারুন অর রশিদ হারু, আব্দুল কাদের মোল্লা, আবু বক্কর সিদ্দীকি, খাকসার আলী জোয়াদ্দার, তাইজাল আলী খান, নিপুনুজ্জামান শান্তনু, রবিউল ইসলাম, অন্নম হোসেন, অমি, মানজিয়ার রহমান চঞ্চল, মামুনার রশিদ ওরফে টাইগার মামুন, আব্বাস উদ্দিন লাদেন, মিঠুন আলী, নাজমুল সাকিব, হাসিব কোরাইশী, শাহিনুর ইসলাম ফানি, বিপুল হোসেন, আতাই চোর, দ্বীন ইসলাম রাসেল, রুহুল আজম, কামাল জোয়াদ্দার, আশিক, জুয়েল আহম্মেদ রনি, শেখ আরিফুর রহমান আরিফ, মীর অভি, সাদ আহম্মেদ, নাসিম আহম্মেদ (মালেক), মজিদ মেম্বার, মেহেদী, মমিজ, পল্লব, আফু শেখ, মিলন মন্ডল, ফিজু শেখ, এনামূল, হান্নান, সেলিম, কাজল, হালিম, পিঠু, সোহেল রানা, ফরহাদ, আব্দুল মালেক, মিন্টু, আজিজ মন্ডল, সুরুজ্জামান সুজন, হারুন, শহিদ মন্ডল, রাশিদুল, মন্টু মন্ডল, তাজন, শেখ মো. আরব আলী, রিপন, আমিরুল, আমিরুল, ঈমানুর, জেমস খান, আরিফ হোসেন, সাগর, ওসমান, সালাউদ্দিন খান তারেক, হারুন-অর-রশিদ হারুন, জহুরুল ইসলাম, হাসান আলী, শাহাজুল হক, তারেক আজিজ টিক্কা, ওমর আলী, রফিক কমিশনার, সোহেল রানা পবন, রতন, পিপুল হোসেন, শামীম উল ইসলাম শামা, আ. মজিদ, রবিউল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, সুরুজ মোল্লা, তরিকুল ইসলাম, আল মাসুম মোরশেদ শান্ত, রহিম উদ্দিন খান, আতিকুল ইসলাম আতিক, সেলিম হোসাইন, ওহিদুল, আসাদুল, রিফাউল, সিরাজ মন্ডল, মুসা আহম্মেদ, মিলন শেখ, আব্দুল আলিম, কামরুজ্জামান নাহিদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিসহ মোট ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, তদন্তের জন্য কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তদন্ত রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করা হবে।
কুষ্টিয়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. শহীদ আবু সরোয়ার জানান, আদালতের নির্দেশে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিহতের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের ছেলে সুজন এজাহারে উল্লেখ করেন, তার বাবা বাবলু ফারাজী রাস্তাঘাট, হাটবাজারে ঘুরে গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ইত্যাদি বিক্রয় করতেন। গত ৫ আগস্ট এক নম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নির্দেশনায় ২ থেকে ১২ নম্বর আসামির হুকুমে অন্য সকল আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, হাতুড়ি, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, ইটপাটকেল ইত্যাদি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করেন। বাবলু ব্যবসার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে থানা মোড়ের পশ্চিম পার্শে পদ্মা প্রিন্টার্সের সামনের গলিতে আন্দোলনকারী ও আসামিদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। ১২ থেকে ১৮ নম্বর আসামিরা তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। অন্য আসামিরা তাদের বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকে। হকার বাবলু পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে গলির মধ্যে থেকে নিজের প্রাণ রক্ষা করার চেষ্টা করতে থাকাকালীন আসামি এসআই সাহেব আলী তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মাথার ডান পাশে গুলি করলে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে বাবলু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে লোকজন তাকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
রাজু আহমেদ/এমজেইউ