রাজশাহীতে ডুবে গেছে ফসল, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে চরবাসী
পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চৌমাদিয়া, লক্ষীনগর ও দিয়ারকাদিপুর চর ডুবে গেছে। একই সঙ্গে পানিবন্দি অবস্থায় কালিদাশখালি, নিচপলাশী, কাঁচপুরচরসহ বাকি ৯টি চরের হাজারও চরবাসী। এমন অবস্থায় চরবাসী সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গবাদি পশু নিয়ে। উঁচু জায়গা না পেয়ে পানির মধ্যেই বেঁধে রেখেছেন গরুগুলো। শুধু গবাদি পশু নয়, পানি জমে অনেকের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কেউ কেউ আগাম ফসল তুলে নিলেও রক্ষা হয়নি ফসলি জমির।
জানা গেছে, বাঘা উপজেলায় পদ্মার জেগে উঠা ১৫টি চর রয়েছে। এসব চরে জমি রয়েছে ৬ হাজার ৩০ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর। এসব জমিতে সারা বছর ধান, গম, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ফসল ফলাায় চাষিরা। বর্তমানে চরের এই জমিগুলোতে পেঁয়াজ, কালাই, আখ, কপি ও টমেটো রয়েছে। কিন্তু বন্যার পানিতে চরের নিচু এলাকার সব জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
চরের বেশির ভাগ মানুষ ভূমিহীন অসহায় খেটে খাওয়া। তারা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপকে বরণ করে বসবাস করছেন। আর এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ শুকনো মৌসুমে কৃষিকাজ আর বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক মন্থর। চরে ফসল, সম্পদ ও জনবসতি রক্ষার জন্য কোনো বাঁধ নেই।
এসব চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। কোনো চরে ভরা জোয়ারের পানির প্লাবন থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। এখানে ফসল উৎপাদনের বিষয়টি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছে, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে। তাই তারা সম্পদের মালিকানা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হতে হয় অনেক সময়।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার মধ্যে লক্ষীনগর চরে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজ চাষি শাহ আলম, ইসমাইল হোসেন, কিতার উদ্দিন পেঁয়াজ হাতে নিয়ে হাহাকার করছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি দেখে চাষিরা উঁচু করে আইল বাঁধছেন। কিন্তু আইল বাঁধার পর রোপণ করা পেঁয়াজের জমিতে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে পারছেন না। রোপণ করা পেঁয়াজ পানির মধ্যে থেকে হাতড়ে তুলে দেখান।
পেঁয়াজ চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি দেখে উঁচু করে আইল বেঁধেও আগাম রোপণ করা পেঁয়াজের জমিতে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে পারছি না। অনেকেই পেঁয়াজ আগেভাগে তুলে নিয়েছে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। এই পেঁয়াজ বিক্রি করে জমিতে লাগানোর শ্রমিক খরচ উঠবে না।
পেঁয়াজ চাষি কিতার উদ্দিন বলেন, নদীর পানি বেড়ে বন্য হয়েছে চরে। ফলে চরের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। উপায় না পেয়ে অনেকেই পানির মধ্যে গবাদি পশু বেঁধে রাখছেন। এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় তার মতো অনেকের ফসল তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চরে বসবাস করি। এক বুক পানির মধ্যে যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তার চেয়েও ভয়াবহতার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। তবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছি।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে পদ্মার ভাঙনে প্রায় সহস্রাধিক বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার, বিজিবি ক্যাম্প, হাজার হাজার বিঘা আবাদি-অনাবাদি জমি চলে গেছে পদ্মার গর্ভে। ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে হাজারো পরিবার। এই বন্যার পানির কারণে ফসল নষ্ট হওয়া ছাড়াও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পদ্মার চরের মোট জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৩০ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর। পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে নিচু জমির কিছুটা পেঁয়াজ ও অন্যান্য ফসল ক্ষতি হয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। কোনো ধরনের সহযোগিতা এলে আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দেব।
শাহিনুল আশিক/এএমকে