অভিযানে যাওয়ার কথা বলেছিলেন মা-বোনকে, খেতে চেয়েছিলেন পিঠা
‘আপু আমি অভিযানে যাচ্ছি, দোয়া কইরো। চিন্তা করো না, অভিযান শেষ করে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবনি।’ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বোন তাসনুভা ছারোয়ার সূচির সঙ্গে চট্টগ্রামের চকরিয়াতে ডাকাত প্রতিরোধ অভিযানে গিয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়া সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের (২৩) এই ছিল শেষ কথা।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেনা কর্মকর্তা নির্জনের টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি দেখা যায়। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। পরিবারের সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, নিহত সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ার নির্জন পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।
ডাকাতদের হাতে নিহত সেনা কর্মকর্তা নির্জনের বোন তাসনুভা ছারোয়ার সূচি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গতকাল রাতে নির্জন আমাকে ফোন করে বলেছিল, আপু অক্টোবরের ১ তারিখ আমার জন্মদিন, সেদিন আমি ছুটিতে আসব, তখন আমাকে কি উপহার দিবা? তখন আমি জানতাম যে নির্জন পশুপাখি পছন্দ করে। তাই আমি নির্জনকে বলেছিলাম যে জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করব। শুধু তাই নয় ফোন করে আরও বলেছিল আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে? আমি মাংসের পিঠা খাব। ভাইকে আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না।’
সূচি আরও বলেন, আমার ভাই আগামী ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেত। এজন্য সে ভালোভাবে কাজ শুরু করেছিল। আমরা আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্য পাত্রীও দেখা শুরু করেছিলাম। সব স্বপ্নই শেষ হয়ে গেল। ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না।
নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান বলেন, ‘ছেলে রাতে কল দিয়ে বলেছিল, মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো। শেষ করে কল দিবনি। আমার ছেলে আর কল দিলো না, আমার ছেলের হত্যার বিচার দাবি করছি।’
নির্জনের বাবা ছারোয়ার জাহান বলেন, আজ সকালে কল আসে নির্জন মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কি থেকে কি হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিল আমার ছেলে। সেও এখন হারিয়ে গেল।
প্রসঙ্গত, আজ ভোরে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প হতে সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাতদল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন ডাকাতদলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাতদলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অভিজিৎ ঘোষ/এমজেইউ