কলকাতার সঙ্গে ভোমরা স্থল বন্দরের দূরত্ব কম, বেড়েছে রাজস্ব আদায়
বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাময় স্থল বন্দর সাতক্ষীরা ভোমরা। জেলা শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ভোমরা স্থলবন্দর। এই বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। স্টেশনে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি, সেই সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আদায়।
দিন দিন রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে এই বন্দরে আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বেনাপেল বন্দরের একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও পত্রপত্রিকায় ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ প্রচার করে ভোমরা বন্দর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর করা হয়। দীর্ঘ দিন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যায় দুধ ছাড়া আমদানি করা সব পণ্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
দূরত্ব কম, পণ্য পরিবহনে ফুয়েল সাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারণে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ গত অর্থ বছরে রপ্তানি করা পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ৬২৭টি এবং ২০২৩-২৪ চলতি অর্থ বছরে রপ্তানি করা পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮০টি। যা গত অর্থ বছরের তুলনা চলতি অর্থ বছরে রপ্তানি করা গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৬৫%। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে আমদানি করা পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৬৩ হাজার ৯০২টি, যা গত অর্থ বছরে ছিল ৮২ হাজার ২২৮টি। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম এসেছে ১৮ হাজার ৩২৬টি।
অপরদিকে গত অর্থ বছরে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৯ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন এবং চলতি অর্থ বছরে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ মে. টন। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে আমদানি করা পণ্য কম হয়েছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থান। দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যসহ আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে ওই স্থলবন্দর দিয়ে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড় ৫০ থেকে ১০০ পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুঁকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভেতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল স্কেলে সব ধরনের পণ্য পরিমাপ করা হয়। কোনো আমদানিকারকের ওজন ফাঁকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মাকসুদ খান বলেন, ভৌগোলিক কারণে দেশের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় ভোমরা স্থল বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব সব থেকে কম। এ কারণে এই বন্দর দিয়ে আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ কম পড়ে, ব্যবসায়ীরা নানা সুবিধা পায়।
ভোমরার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরীক্ষণ) বাবলুর রহমান বলেন, এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সব পণ্য পরিবহনের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সবার উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এখানে এনালগ পদ্ধতিতে কোনো ওজন পরিমাপের সুযোগ নেই। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরের ওজন ফাঁকির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ভারত থেকে পিটি-১৩২০১১ নম্বরের যে ট্রাকে করে ভোমরা বন্দরে আপেল প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আগেও এই নম্বরের কোনো ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে নাই। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন (ট্রাফিক) বলেন, প্রায় ১১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে স্যান্ড ফিলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করা হলে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবস্থা বাণিজ্যে আরও গতি আসবে। বছরের কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের আরও বেশি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
ভোমরা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মতলেবুর রহমান বলেন, বিগত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। আগামীতে সবার সহযোগিতায় চলতি অর্থ বছরে তুলনায় আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে।
ইব্রাহিম খলিল/এসএম