‘দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কী করব’
দুই বছর বয়সী মেয়ে ও স্ত্রীকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় বাড়িতে রেখে রাজধানী ঢাকায় মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করতেন নয়ন ইসলাম (২৬)। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে যোগ দিতেন মিছিল-সমাবেশে। ৪ আগস্ট মিছিলে যোগ দিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর প্রায় দেড় মাস জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) মারা গেছেন তিনি। দরিদ্র নয়নের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী ও মেয়ে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্থানীয় একটি মাঠে জানাজা শেষে নয়নের মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
এর আগে শনিবার ((২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নয়নের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নয়ন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবধা (সত্য মঙ্গলের কোর্ট) গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন বছর দেড়েক আগে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায় স্ত্রীকে নিয়ে একই গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান নয়ন।
নয়নের স্ত্রী রিপা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কী করব। কীভাবে আমার সংসার চলবে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বিয়ের পর থেকে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে নয়ন চাকরি করেছে। তার টাকায় মেয়েকে বড় করে তোলার চেষ্টা করছিলাম । কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন আমার ভেঙে গেছে। নয়নকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি ভাত খাব না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিপা।
তিনি আরও বলেন, যেদিন মিছিলে যাচ্ছিল সেদিন আমাকে ফোন করেছিল। নয়ন আমাকে বলেছিল দেশ স্বাধীনের পথে আমাকে নিয়ে কোনো রকম টেনশন করো না। কিন্তু পরের দিন খবর আসে নয়ন মাথায় গুলি খেয়েছে। দেড় মাসের মতো আমি তার সেবা করেছি, আল্লাহর কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি, কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেল না। এখন সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, আমি এই হত্যার দ্রুত বিচার চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল হক বলেন, নয়ন এক সময় তাদের গরুর খামারে কাজ করতো। সে খুবই ভালো ছেলে ছিল। আমার ভাই এরশাদুল হকের মেয়ে রিপা আক্তারের সঙ্গে প্রায় চার বছর আগে বিয়ে হয় নয়নের। পরে পরিবারের চাপে সে ঢাকায় যায়। পরে ৪ আগস্ট মিছিলে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এই খবর কোনোভাবেই এলাকার মানুষ মেনে নিতে পারছে না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, নয়নের মুত্যুর খবরের পর সকাল থেকে আমার উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজেও সেখানে গিয়ে পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছি। তাদের পাশে থেকে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আশা করছি তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
নয়নের জানাজায় আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম কামাল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর