অশান্ত পাহাড়ের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করল জেএসএস
সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নামে ইউপিডিএফ তাদের দেশি-বিদেশি ইন্ধনদাতাদের টাকায় সাধারণ পাহাড়ি ছাত্রদের দিয়ে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে দাবি সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমার।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাঙামাটির রিজিয়নের প্রান্তিক হলে জেলার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা বলেন, তাদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য পার্টির (জেএসএস) পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তাদের (ইউপিডিএফ) বুঝতে হবে আমরা সবাই পাহাড়ে শান্তিতে থাকতে চাই। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে জেলা পরিষদসমূহের নির্বাচন, স্থানীয় পুলিশ বাহিনী গঠন করাসহ চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা না গেলে পাহাড়ে শান্তি আসব না।
সভা শেষে গণমাধ্যমকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং এর সুষ্ট তদন্ত করা হবে। কোনো অবস্থায় পরিস্থিতির অবনতি করা যাবে না। যারা চেষ্টা করবে তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে।
সভায় পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন’র সঙ্গে ইউপিডিএফের সমর্থন ও সম্পৃক্ততা নিয়ে করা জনসংহতি সমিতির নেতা ডা. গঙ্গা মানিক চাকমার বক্তব্যকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিচারিতার রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মুখপাত্র ও সংগঠক অংগ্য মারমা।
তিনি বলেন, ইউপিডিএফের রাজনৈতিক অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও আমাদের প্রকাশ্য সমর্থন ও অবস্থান ছিল। সেই সময়ও জনসংহতি সমিতি নীরব ভূমিকা পালন করেছে, বরং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা হিসেবে আরো অনেকের সঙ্গে জেএসএসের ঊষাতন তালুকদার সরকারের দালালি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেটি জনগণ ভুলে যায়নি। তাদের ভুল রাজনীতি, ক্রমশ তাদের মুসলিম লীগের মতো পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা হয়ত এখনো তারা বুঝতে পারছেন না।
অংগ্য মারমা বলেন, সারা দেশের আন্দোলনের চেতনা ও প্রভাব পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের ওপরও পড়েছে স্বাভাবিকভাবে। তাই তারা ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ গড়ে তুলে আমাদের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ‘এগত্তর’ স্লোগান তুলেছে। তাদের এই স্পিরিটকে আমরা সাধুবাদ জানাই, সমর্থন জানাই। কিন্তু জেএসএস বরাবরের মতই নতুন প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি বুঝতে অক্ষম। তাই তারা এই নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ট্যাগ দিচ্ছে, এটা দুঃখজনক। এই শিক্ষার্থীরা আমাদের এক হতে বলছে, চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে, কই তারা তো ইউপিডিএফের ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে না। তবুও কেন জনসংহতির এত দুশ্চিন্তা, এত ভয়?
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তৎকালীন নেতৃত্বের অদূরদর্শীতার কারণে পাহাড়িরা ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এখনো জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জনসংহতির মতো নির্বাক হয়ে থাকলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করত না। তাই আমরা বর্তমান সরকারকে সমর্থন জানিয়েছি। সক্রিয়ভাবেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল ইউপিডিএফ।
অংগ্য মারমা বলেন, খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজনের মৃত্যু এবং তারপরের ঘটনাপ্রবাহই প্রমাণ করে কারা নেপথ্যে থেকে কী করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিতো, তবে ঘটনা এতদূর গড়াতো না।
মিশু মল্লিক/কেএ