হঠাৎ কেন অশান্ত পাহাড়
খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে গত তিন দিনে সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই শহরেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
এদিকে পাহাড়ের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে পার্বত্য তিন জেলায় (খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান) ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে চলবে অবরোধ কর্মসূচি।
জানা যায়, খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার জেলার দীঘিনালায় সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি জেলায়।
এসব সহিসংতার বিষয়ে কথা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলে হামলা করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জেলা শহরের নিউজিল্যান্ড এলাকায় মো. মামুন নামের একজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে জেলার দীঘিনালায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। দীঘিনালায় পরিকল্পিতভাবে দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা করে। মূলত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই দেশি-বিদেশি চক্রগুলোর সহযোগিতায় পাহাড়ি সংগঠনগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে স্বপ্ন দেখছে স্বায়ত্তশাসনের।
আরও পড়ুন
অপরদিকে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। দলটির মুখপাত্র নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির সহিংস ঘটনায় পাহাড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গুজবের কারণে ভয়ভীতিতে আছেন পাহাড়ের সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতে প্রত্যেককে সহনশীল হতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন। এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
মোহাম্মদ শাহজাহান/এমজেইউ