পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
পদ্মার ভয়াল ভাঙনের মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। শত শত বিঘা ফসলি মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন থেকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে প্রায় তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়৷ ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটিতে। এতে অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ যানজট লেগে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন মহাসড়কের যাত্রীরা।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের শত শত বিঘা ফসলি মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমাদের বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের ঘরের কাছে চলে এসেছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় সড়ক অবরোধ ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। নদী ভাঙন সমস্যার সমাধান না হলে এই অবরোধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তারা আরও বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়িয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়িয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশ কিছু এলাকা। বিগত তিন বছর ধরে নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাড়ি, শতবর্ষী স্কুলকলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে আছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো। দ্রুত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার ও ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছাড়েন। আটকে থাকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, সাহেবনগর বেড়িবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রুত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০০ মিটার গ্রোয়েন (বাঁধ) নদীর মধ্যে আছে। সেখানে পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপর পাড়ে ভাঙছে। এমনটাই ধারণা করছেন এলাকাবাসী। যেহেতু নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে তাই ভাঙনটা তীব্র হচ্ছে।
রাজু আহমেদ/এফআরএস