সমুদ্র উত্তাল, ঘাটে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার ট্রলার
বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল বঙ্গোপসাগর, থেমে থেমে হচ্ছে ভারী বৃষ্টি, সেইসঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। এ অবস্থায় পায়রা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগর উত্তাল থাকায় বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে তীরে ফিরছেন উপকূলীয় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জেলেরা। বৈরী আবহাওয়ায় মাছশূন্য ট্রলার নিয়েই নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরছেন অনেক জেলে। লাগাতার আবহাওয়া খারাপ থাকায় হতাশ জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
মাছ শিকার শেষে ট্রলার থেকে মাছ ওঠা-নামায় সরগরম থাকতো আলীপুর-মহিপুর বিএফডিসি ঘাট। কিন্তু এখন সেই ঘাটে নোঙর করা আছে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কেউ তিন দিন আবার কেউ পাঁচ দিন ট্রলারে বসে বেকার সময় পার করছেন। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও দুই দিন থাকতে পারে নিম্নচাপের প্রভাব।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলীপুর ঘাটে নোঙর করা হয়েছে কয়েক হাজার মাছের ট্রলার। উত্তাল ঢেউয়ের কবল থেকে জানমাল সুরক্ষার তাগিদে এসব ট্রলার নিয়ে জেলেরা তীরে ফিরে এসেছেন। তবে অধিকাংশ ট্রলারই ঘাটে ফিরেছে শূন্য হাতে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ী ও জেলেরা।
জেলেরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত ইলিশের স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন তারা। এরইমধ্যে ভরা মৌসুমে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ শিকারে যেতে ব্যাহত হচ্ছে মৎস্য আহরণ কার্যক্রম। তবে চলতি মৌসুমে কিছুদিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও তেমন ইলিশের দেখা পাননি জেলেরা। তাই আবারও প্রাকৃতিক বাধার মুখে পড়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলেদের কপালে।
আলীপুর বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী কাজী আবুল হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরতে হতো না জেলেদের। বর্তমানে সাগরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই, তাই সমুদ্র থেকে সবাই ঘাটে ফিরে আসছে। প্রতিটা ট্রলারে দুই থেকে তিন লাখ টাকার বাজার করে দেওয়া হয়, কিন্তু সে অনুযায়ী কোনো মাছের দেখা মিলে নাই। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়ার সুযোগ নাই।
এফবি সাগর ট্রলারের মাঝি রহমান বলেন, আমরা হাতিয়া এলাকার মানুষ। বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ আহরণ না করে কলাপাড়া উপকূল কাছাকাছি হওয়ায় এখানে চলে এসেছি। এখন এখানে ট্রলারের উপর শুয়ে-বসে সময় পার করছি। যখন আবহাওয়া ভালো হবে তখন আবারও সাগরে মাছ শিকারে যাব।
আরও পড়ুন
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে জেলেদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলারের মালিক ও জেলেদের। মাঝে আবহাওয়া কয়েকদিন ভালো ছিল, কিন্তু এখন আবার আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে হতাশ মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে করে দুশ্চিন্তায় এখানকার জেলেরা। আশা করি আবহাওয়া ভালো হয়ে যাবে, তখন জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ শিকার করতে পারবে।
কলাপাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইলেকট্রনিক প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এন্ড পিবিও আব্দুল জব্বার শরীফ জানান, সমুদ্র বন্দরসমূহে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তরবঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। জেলেদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
এএমকে