হাইকোর্টের নির্দেশে ভুলুয়া নদীর অবৈধ বাঁধ অপসারণে কার্যক্রম শুরু
লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা দিয়ে বয়ে চলা ভুলুয়া নদীতে থাকা অবৈধ বাঁধ অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশনায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নদীটির কমলনগর উপজেলা অংশে অবৈধ বাঁধ নিয়ে টানা দুই দিন তদন্ত করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই দিন দুপুরেই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার পালোয়ান হাইকোর্টের আদেশপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় হাইকোর্টের আদেশের আলোকে ভুলুয়া নদীসহ লক্ষ্মীপুরের সব খাল অবৈধ দখল চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করতে লিখিত আবেদন করেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অবৈধ দখল উৎখাত করে খাল সমূহের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি উল্লেখ করা হয়।
এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সাত্তার পালোয়ান মানবসৃষ্ট বন্যা রোধে ভুলুয়া নদীসহ লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সকল খাল থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভুলুয়া নদীসহ সকল খাল দখলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এতে ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখলের ঘটনা তদন্ত ও অবৈধ বাঁধ অপসারণে সময় বেঁধে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ দখলের ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে হবে। তদন্তপূর্বক ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে দখল উচ্ছেদ করে ভুলুয়া নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে হাইকোর্টকে প্রতিবেদন দিতে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট সাত্তার পালোয়ান বলেন, ৪৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ভুলুয়া এলাকায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যার পানি কমবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এজন্য প্রথমেই ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষে নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণের জন্য ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি হাইকোর্টের আদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসককে হস্তান্তর করেছি। পত্রপত্রিকায় সংবাদ দেখে ইতিমধ্যে তিনি অবৈধ বাঁধ চিহ্নিতের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশাসন শতভাগ কাজ করবে বলে জানিয়েছে। তবে এতে তারা জনসম্পৃক্ততা চেয়েছে। মানবসৃষ্ট বন্যার কারণ সকল খালের বাজারের অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। সেই দখলদারদের জরিমানার আওতায় আনা হোক। অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙা হোক। যেভাবেই হোক খালগুলো দখলমুক্ত করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। এর আগে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে নিদের্শনার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা কাজ শুরু করেছি। পানি উন্নয়নবোর্ডসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়াররা টিম নিয়ে কাজ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার মধ্য দিয়ে মেঘনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ভুলুয়া নদীর লক্ষ্মীপুর অংশের দৈর্ঘ্য ৭৬ কিলোমিটার। জলাধারটি আগে গড়ে ৩০০ মিটার চওড়া হলেও এখন কমে গড়ে ১০০ মিটার হয়ে গেছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে