সিলেটে শাহপরাণের মাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষ-ভাঙচুর
সিলেটের হযরত শাহপরাণ (রহ.)- এর মাজার এলাকায় পাগলের বেশধারীদের সঙ্গে স্থানীয় মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ হামলা হয়। এ সময় মাজারের খাদিমদের দান-সদকা সংগ্রহের বৈঠকখানাসহ মাজার অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়।
পরে মুসল্লি ও ছাত্র-জনতা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাগলের বেশধারী হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় হামলায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন দিন আগে শাহপরাণ (রহ.)- এর মাজারে বার্ষিক ওরস শুরু হয়। এর আগে ওরসকে কেন্দ্র করে গান-বাজনাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে তার জন্য গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। এমনকি মাজার কর্তৃপক্ষ বৈঠকে ওরসের নামে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং পরবর্তীতে ওরসে গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাই ওরস চলাকালে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম সমাজের একটি প্রতিনিধি দল প্রথম দিন থেকেই মাজার এলাকায় অবস্থান করেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতেও তারা মাজারের মসজিদের সিঁড়িতে বসে জিকির ও গজল পরিবেশন করছিলেন। এ সময় ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাধা পাগল বেশধারী লোকজন তাদের ওপর হামলা করেন।
হামলার শিকার আলেমরা এ সময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মসজিদে আশ্রিতদের উদ্ধার করেন এবং পাগল বেশধারীদের ওপর চড়াও হন । এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ও উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলার বিষয়ে হযরত শাহপরাণ (রহ.)- এর মাজারের খাদিম সৈয়দ কাবুল আহমদ বলেন, গান-বাজনা না করার পক্ষের হুজুররা মাজারের সামনের সিঁড়িতে বসে জিকির করছিলেন। পরে তৃতীয় একটি পক্ষ রাতে পাগল বেশধারীদের উসকানি দিলে তাদের ওপর ঢিল মারা হয়। মারার পর হুজুরদেরকে দ্রুত মসজিদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হুজুররা বিভিন্ন মাধ্যমে জানান যে তাদেরকে মাজারে পাগলরা বন্দি করে রেখেছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে তৌহদি জনতাসহ স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়লে পাগলের বেশধারী হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এর মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী মাজারের মহিলা ইবাদতখানাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাজারে ওরসের নামে নাচ-গান-মদ-জুয়া, গাঁজা, অশ্লীলতা, নারী-নৃত্যসহ যাবতীয় অসামাজিক-অনৈতিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছিলাম। সব কিছু সুন্দর ছিল। কিন্তু সোমবার গভীর রাতে শতাধিক পাগলবেশী লাল কাপড় পরা লোক মিছিল শুরু করে। তখন আমি নিজেই ওই স্থানে গিয়ে মিছিলকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু একটি পক্ষ তাদেরকে ইন্ধন দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, পাগলবেশী লাল কাপড় পরা লোকজন বেশিরভাগ মাদকাসক্ত ছিলেন। তাদেরকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি ও রড দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণের ভাব দেখে মনে হয়েছে যারা গান-বাজনা ও অশ্লীলতা বন্ধের পক্ষে ছিলেন তাদেরকে মারতে এসেছে। মাজারের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য আমি উভয়পক্ষকে বলব শান্ত থাকুন।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী ৪, ৫ ও ৬ রবিউল আউয়াল তিন দিনব্যাপী ওরসের আয়োজন করে থাকে মাজার কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে প্রথম দিন খতমে কোরআন, দোয়া ও জিকির এবং মিলাদ মাহফিল। দ্বিতীয় দিন গিলাফ চড়ানো, গরু জবাই, সারারাত জিকির ও মিলাদ মাহফিল এবং ভোর ৪টায় ফাতেহা পাঠ। শেষ দিন বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের পর নেওয়াজ বিতরণ করা হয়।
মাসুদ আহমদ রনি/আরএআর